আমি তাঁকে দেখেছি অনেক কাছ থেকে-বন্ধু যে আমার

 

আমি তাঁকে দেখেছি অনেক কাছ থেকে- বন্ধু যে আমার।।

ডেস্ক নিউজ।।

সময়টা1999 সাল। নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল গড়তে যখন সহপাঠীরা এইচএসসি পরীক্ষার জন্য দিনরাত পড়াশোনা করছিল। আর আমি কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ঈর্ষণীয় রেজাল্ট করে স্বপ্নের বীজ বুনতে ঢাকা কলেজ ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে পড়ি। আমি কিশোর বয়স থেকেই ছাত্র রাজনীতির প্রেমে পড়ে যাই, কারন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্ম নিয়ে পরিবারের সদস্যদের থেকে জানতে পারি, আমাদের বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি, আমার দাদী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুব মজার মজার রান্না করতেন। আরো অনেক ছোট-বড় কাহিনী শুনে ধীরে ধীরে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন পালন করতে থাকি। বঙ্গবন্ধু কিশোর বয়সে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হয়েছিলেন। উনার জীবনের প্রতিটি টুকরো টুকরো ঘটনাই ছিল আমার প্রেরনা।। নিজের সবটুকু উজার করে যখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে আরো শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকার গঠন করে। আর আমার মত অসংখ্য ছাত্রলীগ কর্মীদের উপর শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন।

সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা মনে হলে আজও আমার শরীর শিউরে ওঠে। সেদিন রাতে আমি ঢাকা কলেজের হলে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কতিপয় বিএনপি-জামাত-শিবিরের পেটোয়া বাহিনী হঠাৎ করে আমার রুমে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাকে ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা দিয়ে পেটানো শুরু করে। একপর্যায়ে মারতে মারতে আমাকে মেঝেতে উপর করে ফেলে দেয়। আমার দুই হাত দুই পা ১৫/২০ জন চেপে ধরে রাখে। আমার পরনের টিশার্ট ছিড়ে আমার পিঠের উপর গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুরো পিঠে ছ্যাকা দেয়। আমার ঝলসে যাওয়া পিঠের যন্ত্রণায় আমার চিৎকার তখন কারোর মন গলাতে পারেনি। তখনও কি তাদের নির্মমতা ক্ষান্ত হয়েছে? না- সেই ঝলসে যাওয়া পিঠে তারা লবণ-মরিচ ছিটিয়ে দেয়। আমি যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছি তখন আমাকে ঘিরে বিএনপি-জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের অট্টহাসিতে আমার চিৎকার ম্লান হয়ে যায়। এখনো সেই হাসি আমার বুকে তীরের ন্যায় বিঁধে।

আমার সহপাঠীরা যখন এইচএসসি পরীক্ষার শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম।

এতোটুকু বয়সে এত অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ণ বুকে চেপে রেখে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেই। আলহামদুলিল্লাহ ঢাকা কলেজ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ হতে একমাত্র স্টার মার্ক পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।

কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে আমার উপর নির্যাতনকারীদের উপস্থিতি আমার চারপাশে দেখতে পাই। তাদের রক্তচক্ষু, সেই গগনবিদারী অট্টহাসি আমাকে তাড়া করে বেড়াতে থাকে। যে ছাত্ররাজনীতিকে কিশোর বয়সে ভালোবেসে স্বপ্নের বীজ বুনেছিলাম তাকেই আলিঙ্গন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে এমন একটি রাত নেই যেই রাতে আমি হলে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোতে পেরেছি। সে সময় আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। প্রতিদিন বিএনপি-জামাত-শিবিরের হামলা মামলার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকি। একটা সময় তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতির ময়দানে নেতৃত্ব দেয়া শুরু করি। মনের মধ্যে একটাই বিশ্বাস ছিল যদি বাঁচতে হয় বাঘের মত একদিনই বাঁচবো।

আমার কলেজের সহপাঠীরা যখন মধুর ক্যান্টিনে কিংবা ক্যাম্পাসের কোন এক গাছ তলায় হৈহুল্লোর কিংবা মজার আড্ডা অথবা প্রেমিকার বাঁধনে ছাত্রজীবনের সবচাইতে সোনালী সময় পার করছিল আমি তখন হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা নিয়ে ঘুমোতে যেতাম যদি পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়।

১/১১ তে যখন ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের অবৈধ সরকারের তাণ্ডবে পুরো দেশ অস্থির। তখন আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি। জীবনের সমস্ত নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রতিরোধের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।

আর সেই আন্দোলনের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। গর্বে আমার বুকটা ভরে ওঠে যখন ভাবি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই সাফল্যে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যখন বন্ধুরা নিজেদের ক্যারিয়ার গোছানোতে ব্যস্ত। যখন আমার সামনে প্রশাসনিক ক্যাডারে বড় বড় চাকরির হাতছানি। তখনো সেই কিশোর বয়সের প্রেম, “ছাত্র রাজনীতি” আমি চালিয়ে যাই। সেই ভালবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ একটা সময় আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই।

কেউ যদি প্রশ্ন করে তোমার কাছে ছাত্র জীবন মানে কি? আমার একটাই উত্তর ” আমার কাছে ছাত্র জীবন মানে ছাত্র রাজনীতি” ।

ছাত্র রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।

রাজনীতির পাশাপাশি পেশাজীবনে আমার জন্মস্থান কুমিল্লার মানুষের কথা ভেবে আমি ২০১৪ সালে মোকাম ইউনিয়ন থেকে মাত্র ১০ জনকে নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে আমার দ্য গ্লোবাল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড এর নামে একটি রপ্তানিমুখী আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। যেখানে ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কখনো আমাকে রাজনীতির বাইরে কোন অর্থ, ক্ষমতার মোহ কাছে টানে নাই। আমি রাজনীতি করে গিয়েছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। আর তার প্রতিদান হিসেবে পেয়েছি অগণিত মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। এই ভালোবাসাই আমার একমাত্র সম্বল।

আমার রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ তিতিক্ষা নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত হয়ে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময় যে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি সেই ভালোবাসার সম্বলে সংসদীয় আসনে নির্বাচন করার সাহস বুকে এসেছে, কিন্তু দুঃখ লাগে এটা দেখে যাদের জীবন কেটেছে বিলাসিতায়, শুধু অর্থের বিনিময়ে সংসদীয় নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ঠিক তখনই আমার মনে একটাই বিশ্বাস কাজ করে, আমার কৈশোর থেকে পৌরত্বের দিকে হেলে পড়া জীবনে, এত ত্যাগ, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করার পরেও সাধারণ মানুষের যে অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছি তার কাছে তাদের পাহাড়সম অর্থ প্রাচুর্য মূল্যহীন।

ভালো থাকুক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্য নিবেদিত প্রতিটি মানুষ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি।
সহ-সম্পাদক,
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

আরো পড়ুনঃ