কুমিল্লায় আ. লীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২

জহিরুল হক বাবু।

পূর্ব শত্রুতা ও মাদক সেবনের ভিডিও ফাঁস করার জেরে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুলকে হত্যা করা হয়। হত্যার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে হত্যাকারীরা জড়ো হয়েছিলেন একই মসজিদের জুম্মার নামাজে। এর আগের দিন রাতে পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ছুরি সংগ্রহ করা হয়েছিল। নামাজ শেষ করেই ফেরার পথে এনামুলকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হত্যার প্রধান আসামি আমান ও সাঈদকে গ্রেপ্তারের পর আসামিদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান। আজ রোববার দুপুরে এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা হলেন—সদর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামি কাজী নিজাম উদ্দিন (৫৫) এবং ১০ নম্বর আসামি মো. জাকির হোসেন (৪৫)। গতকাল শনিবার রাতে তাদের খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা ও কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। এর আগে খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানার লৌহগং এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি কাজী আমান উল্লাহ ও ৩ নম্বর আসামি আবু সাঈদকে শনিবার সকালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।

পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, শুক্রবার কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের আলেখারচর দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের সামনে দুষ্কৃতকারীরা এনামুল হককে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল ওদুদ বাদী হয়ে গতকাল শনিবার ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিম ও কোতোয়ালি থানা-পুলিশের যৌথ অভিযানে কাজী নিজাম উদ্দিন এবং মো. জাকির হোসেনকে শনিবার রাতে খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামি আমান উল্ল্যাহর দেওয়া তথ্যমতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দত্তসার দিঘী এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারটি উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থানার লৌহগং এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি কাজী আমান উল্লাহ ও ৩ নম্বর আসামি আবু সাঈদকে গতকাল শনিবার সকালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামি কাজী আমান উল্ল্যাহ ও আবু সাঈদ আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, মাদ্রাসার কমিটি, গত ইউপি নির্বাচন ও মসজিদ কমিটি নিয়ে জহির ও এনামুলের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। সর্বশেষ জহিরের ফেনসিডিল খাওয়ার ভিডিও প্রকাশ ও এই ভিডিও নিয়ে এনামুলের প্রচারণার কারণে সম্প্রতি এ বিরোধ চরমে উঠে। তা ছাড়া এনামুলের সঙ্গে আসামি আমান উল্ল্যাহ ও সাঈদের ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল। এসব বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

পরিকল্পনা অনুয়ায়ী শুক্রবার আসামিরা সবাই একই মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ার পরিকল্পনা করে এবং রাতেই আসামি আমান উল্ল্যাহ একটি সুইচ গিয়ার সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখে। জুম্মার নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক মসজিদ থেকে বাহির হয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে হত্যা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসফাকুজ্জামান, মো. কামরান হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেস বড়ুয়া, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদসহ অন্যরা।

আরো পড়ুনঃ