স্টাফ রিপোর্টার।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন (৪০) হত্যার ৭ দিন পর রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চারজন কে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রবিবার (৭ই মে) সকালে কুমিল্লা নগরীর শাকতলা র্যাব কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য বলেন র্যাব-১১ লেঃ কর্ণেল অধিনায়ক মোঃ তানভীর মাহমুদ পাশা।
আটককৃতরা হলেন, তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দির এলাকার খুরশিদ মিয়ার ছেলে মোঃ ইসমাইল (৩৬)। একই উপজেলার মনাইরকান্দি এলাকার মোঃ আক্তার হোসেন শিকদারের ছেলে সোহেল শিকাদার (৪০), দাউদকান্দি উপজেলা গোপচর এলাকার মৃত বজলুল রহমানের ছেলে শাহ আলম (পা কাটা আলম) (৩৬)।
র্যাব-১১ লেঃ কর্ণেল অধিনায়ক মোঃ তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, গত ৩০ এপ্রিল রাতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের সামনে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জামাল হোসেন (৪৫) খুন হন।
ঐ দিন রাতে নিহত জামালের সাথে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের পাশে একটি দোকানের সামনে মামলার ৩নং আসামী মোঃ ইসমাইল (৩৬) ও এলাকার পূর্ব পরিচিত কয়েক জন ব্যক্তির সাথে একটি দোকানের সামনে অবস্থান করছিল। তখন
০৩ জন বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জামাল হোসেনের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এই সময়ে বোরকা পরিহিত হামলাকারীরা জামালের উপর এলোপাথাড়ি ভাবে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত জামালকে ঘটনাস্থলের উপস্থিত লোকজন গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জামাল মারা যায়।
এরপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিম মাঠে নামে আসামিদের ধরতে। ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বোরকা পরিহিত ০৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী চিহ্নিত করে।
র্যাব জানান, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী বোরকা পরিহিত ব্যক্তিদেরকে র্যাব নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করতে , সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত শনিবার (৬ই মে) বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ এলাকা, ঢাকা জেলার রায়েরবাগ এলাকা ও কালশী, মিরপুর এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত আসামীদের গ্রেফতার করে।
উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম জামালের হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাজটি, সংঘঠিত হয়েছে।
এই মামলার এজাহারনামীয় ০৯ জন আসামীর মধ্যে র্যাব ০৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং এজাহারনামীয় ০১ নং আসামী সুজন নেপালে, ০২ আসামী আরিফ নেপালে, ০৫ নং আসামী বাদল দুবাইতে, ০৬ নং আসামী শাকিল ভারতে ০৮ নং আসামী অলি হাসান সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছে ও ০৯ নং আসামী কালা মনির পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের দেশে ফেরাতে ও গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহযোগীতা কামনা করে র্যাব-১১ চেষ্টা করছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাত ৮টার দিকে গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাঁ এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে জামাল হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. মোয়াজ্জেম আহমেদ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে নিহত জামালের স্ত্রী বাদী হয়ে ৯ জন এজহারনামী আসামী ও ৯ জনকে অজ্ঞাতনামা করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি থানায় মামলা দায়ের করে।