কুমিল্লা নগরীতে অবৈধ স্ট্যান্ডবাজিতে যানজটে দিশেহারা সাধারণ মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার।।
সড়কে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের জোড়ালো ভূমিকা থাকলেও কুমিল্লা নগরীতে এলাকায় এখনো দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অনুমোদনবিহীন ব্যাটারি চালিত হলুদ অটোরিকশা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অবৈধ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
মাঝে মধ্যও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অভিযান থাকলেও কিছু দিন পর ফের দেখা যায় শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে অবৈধভাবে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও সিএনজি অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে পিছন থেকে এসব অবৈধ স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন করছে প্রশাসনের অসাধু চক্র।
গতকাল রবিবার (২০ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সারাদেশে ব্যাটারি ও মোটরচালিত অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কুমিল্লা জেলা পুলিশ সোমবার সকাল থেকে নগরীর কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, পুলিশ লাইন, ঈদগাহ মোড়, চকবাজার, টমছমব্রীজসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে বেশ কয়েকটি রিকশা অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা জেলা পুলিশ।
এর আগে বেশ কয়েকবার সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়। নগরীতে চাহিদার বেশি এসব রিকশা থাকায় বেশিরভাগ সড়কে যানজট লেগে থাকে।
একটি সূত্র জানা যায়, সমগ্র জেলা জুড়ে অবৈধ যাহনবাহন চলাচল সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এদের মধ্যে অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মোটররিকশা মতো অনুমোদনবিহীন যাহনবাহনগুলো নগরীতে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে। কুমিল্লা নগরীর মেগা প্রকল্পে আধুনিকায়ন ও নতুনরুপে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিলেও কোনভাবেই মিলছে না যানজট নিরসন। ফলে দিন দিন হুমকির মুখে নগরে বসবাসকারী ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষ। যানজটের কবলে পড়ে রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স, আদালতে আসা মানুষ ও বিভিন্ন অফিসে যাওয়ার সময় নষ্ট হচ্ছে এই যানজটে আটকে পড়া মানুষদের।
কুমিল্লা বিআরটিএ তথ্যমতে, কুমিল্লা জেলা জুড়ে সিএনজি অটোরিকশা অনুমোদন দিয়েছে প্রায় ৯ হাজার। এসব সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে গিয়ে প্রতিটি সিএনজি সরকারকে প্রতি বছর জমা দেয়া হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার টাকার মত। যার কারণে উপকৃত হচ্ছে সরকার, আদায় হচ্ছে রাজস্ব।
অপরদিকে কুমিল্লা নগরীতে অবৈধভাবে চলাচল করছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর প্রায় ১৮টি স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড ও যত্রতত্রে পার্কিং করে পরিচালনা হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, নিয়ন্ত্রন না থাকায় দিনদিন বিভিন্ন শো-রুম থেকে যোগ হচ্ছে প্রায় ৫০ অধিক। এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে সরকার পাচ্ছে না কোন রাজস্ব, প্রতিদিন ৫০ হাজারের অধিক এই অটোরিকশা এক সাথে চার্জ দেয়ায় রাত দিন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বিদ্যুৎতের, লোডশেডিং হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে মেডিকেল রোড, মসজিদের সামনে থেকে কান্দিরপাড়, ফল দোকানের সামনে থেকে চকবাজার ও কোটবাড়ী রোডে, অপর দিকে বিশ্বরোড মুখী স্ট্যান্ড, কান্দিরপাড় পুবালী চত্ত্বর থেকে রানীর বাজার রোড, সিটিরেস্টুরেন্টের সামনে থেকে শাসনগাছা, নিউ মার্কেটের সামনে থেকে জিলা স্কুল রোড, লিবাটী মোড় থেকে রাজগঞ্জ ও ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, রাজগঞ্জ ট্রাফিক মোড়, কোতয়ালী থানা গেইট ও চকবাজার কাশারীপট্টি মোড়, চকবাজার আলীয়া মাদ্রাসা গেইটসহ প্রায় ১৬টির অধিক স্পটে অটেরিকশা স্ট্যান্ড করে যাত্রী উঠা নামা করা হচ্ছে। এই সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় ৬টির অধিক সিন্ডিকেট, যারা বিভিন্ন নামে বে নামে ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। যার ফলে পর্দার আড়ালে থেকে প্রতিদিন আদায় হচ্ছে ৫ লাখেরও বেশি টাকা। এসব আদায়কৃত চাঁদা যাচ্ছে অজ্ঞাত সিন্ডিকেটদের পকেটে।
এ বিষয় কুমিল্লা জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি হাজী আবদুল কাদের জানান, নগরীতে ৩টি সংগঠন মিলে শ্রমিকদের কল্যাণে ৩০ টাকা করে আদায় করা হয়। বাংলাদেশ হালকা যান ফেডারেশন- রেজি: বি-২১৮১, মালিক সমিতি রেজি: ১৮৭৬ ও শ্রমিক ইউনিয়ন মিলে মোট ৩টি সংগঠন পরিচালনা করে থাকেন। শ্রমিকদের মৃত্যু, পেনশন, চিকিৎসা ভাতা, অনুদান ও সংগঠন পরিচালনার কাজে এই আয় ব্যয় করা হয়। ভাড়া বলতে কিছুই নেই, শুধু মাত্র কল্যাণের ফান্ডে কার্ডধারী সদস্য থেকে এই কল্যাণ আদায় করা হয়
এ বিষয়ে কুমিল্লা ট্রাফিক ইনচার্জ এমদাদ বলেন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটর চালিত রিকশাকে নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচলের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। এই অবৈধ গাড়িগুলো কি নগরীতে চলবে কি চলবে না, তা সিদ্ধান্ত নিবেন নীতি নির্ধারকরা। কুমিল্লায় কোন ধরনের সিটি সার্ভিস না থাকায় এই অবৈধ ইজি বাইক, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা কিভাবে কুমিল্লা নগরীতে চলাচল করছে, তা আদৌ জানা নেই।
এ বিষয় জানতে চাইলে কুমিল্লায় সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটর চালিত রিকশাসহ নিষিদ্ধ যানবাহনগুলো বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় চলমান রয়েছে। কাল থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন হাতে পেলে আমরা এ বিষয় আরো কঠির হবো। কয়েক মাসে জেলা প্রাসনের সহযোগিতা আমরা ৫০০ অধিক এ নিষিদ্ধ যানবাহন জব্দ করেছি। এছাড়া নগরীতে অবৈধভাবে যারা স্ট্যান্ড তৈরি করে চাঁদাবাজি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা জেলা পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতায় কয়েকবার অভিযান হয়েছে।