মাত্র ১৮ হাজার টাকায় জারিনের বিয়ের সাজপোশাক
ডেস্ক নিউজ।।
পারলারে সাজতে গেলাম। যে নারী সাজাবেন, তিনি জানতে চাইলেন হলুদের জন্য সাজতে এসেছি কি না। তাঁকে বিয়ের কথা বলায় একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, এত সাধারণ শাড়ি? তবে সাজগোজ শেষ করার পর শ্বশুরবাড়িসহ সবাই বলেছেন, আমাকে দেখতে নাকি খুব ভালো লেগেছে।’
কথাগুলো বললেন নারী উদ্যোক্তা জারিন তাসনিম। কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক জারিন ৬ আগস্ট বিয়ে করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এখন পর্যন্ত তাঁর বিয়ের সাজপোশাক নিয়ে আলোচনা চলছে।
আলোচনা চলারই কথা। বিয়েতে কে কত দামি এবং জাঁকজমক পোশাক পরতে পারেন, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। আর জারিন হেঁটেছেন স্রোতের বিপরীতে।
বিয়ের কাবিননামায় সই করার কলম, ব্লাউজ, হাতের চুড়ি, গয়না, হাতের পার্সসহ প্রায় সবই কিনেছেন নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। সব পণ্যই দেশি পণ্য। শাশুড়ির দেওয়া সোনার নাকফুল ছাড়া জারিনের শরীরে সোনার তৈরি আর কোনো গয়না ছিল না।
বগুড়ার মেয়ে জারিন বিয়েও করেছেন বগুড়ার ছেলে ওয়ারেস মোস্তফাকে। তিনিও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক। দুজন ঢাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরিচয়, প্রেম—তারপর পরিণয়।
মুঠোফোনে জারিন বললেন, ‘ঢাকার এলিফেন্ট রোডের একটি দোকান থেকে ২০১৯ সালে গোলাপি রঙের জামদানি শাড়িটি কিনেছিলাম সাত হাজার টাকায়। নকশা করা ব্লাউজের দাম তিন হাজার টাকা। লেস দিয়ে কাজ করা মাথার ওড়নার দাম দুই হাজার টাকা। গয়না আড়াই হাজার টাকা। সুতার তৈরি হাতের চুড়ির দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। কারুকাজ করা কলম কিনেছি ১৪০ টাকায়। পার্স কিনেছি ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। বড় খরচ বলতে এই। বলতে গেলে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে আমার সব কেনা হয়ে গেছে। অবশ্য বেশির ভাগ বিয়ের শাড়ির দামই থাকে লাখ টাকা।’
জারিন হাসতে হাসতে জানালেন, শুধু নিজের জন্য নয়, স্বামীর পাঞ্জাবিও খুব স্বল্প মূল্যে একজন উদ্যোক্তার কাছ থেকেই নিয়েছেন।
তবে এটাও স্বীকার করলেন, এসব সম্ভব হয়েছে শ্বশুরবাড়ি বিশেষ করে শাশুড়ির উদারতার জন্য। জারিন বললেন, ‘আমার নাক ফোঁড়ানো হয়নি। শাশুড়ি তা নিয়ে কিছু না বলে একটি টিপ দেওয়া নাকফুল কিনে পাঠিয়েছেন। বিয়ের দিন আমার গয়নার মধ্যে শুধু সেই নাকফুলটাই ছিল সোনার।’
জারিন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই ২০১৪ সাল থেকে তিনি তাঁর বাবার ব্যবসার হাল ধরেছেন। জে এন জে ফ্যাশন অ্যান্ড কালেকশন নামের পেজ থেকে কোরআন শরিফের কভার, থ্রি–পিসসহ বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে বিক্রি করেন।
জারিন ফেসবুকে ১২ লাখ সদস্যের দেশি পণ্যের প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ফোরামের সদস্য। জানালেন, তাঁর বিয়ের ছবি উইতে পোস্ট করার পর অনেকেই জানতে চেয়েছেন কাবিননামায় সই করা কলম, চুড়ি বা ব্লাউজটা কোথা থেকে কিনেছেন। বিয়েতে ব্যতিক্রমী সাজসজ্জার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন অনেকে। বললেন, ‘বিয়ের শাড়ি ছাড়া অন্য প্রায় সব পণ্য অনেক সময় নিয়ে উদ্যোক্তারা কাস্টমাইজ করে আমার জন্য বানিয়ে দেন। আমি চেয়েছিলাম স্বল্প খরচে একটু আলাদাভাবে নিজেকে সাজাতে। আর পণ্য দেশি এবং উদ্যোক্তাদের পণ্য হতে হবে, তা–ও আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম।’
জারিনের মতে, তিনি নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে ভুল করেননি। তাঁর ভাষায় ‘সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস’ কিংবা ঠিক যেভাবে সাজতে চেয়েছিলাম, সেভাবেই সাজতে পেরেছি।সূত্র- প্রথম আলো।