অপরিকল্পিত নগরায়ণে কুমিল্লায় বাড়ছে ঝুঁকি

রুবেল মজুমদার।

কুমিল্লা মহানগরীতে সময়ের সঙ্গে বাড়ছে নগরায়ণের পরিধি। গ্রামেও পড়ছে শহরের ছাপ। বদলে যাচ্ছে সবকিছু। তবে নগরায়ণ যেমন জীবন মান উন্নত করছে, তেমনি ডেকে আনছে নানা ঝুঁকিও। দেশের প্রাচীনতম ইতিহাস ঐতিহ্যের শহর কুমিল্লা। শহরটি ২০১১ সালে নগরের মর্যাদা লাভ করলেও নানা অপরিকল্পনার কারণে ঠিক তেমন ভাবে নাগরিক সেবা পাচ্ছে না নগরবাসী। যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট কুমিল্লা শহরের পুরাতন এ সমস্যা নতুন করে আরো জটিলতা সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত।
দেখা যায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়, চকবাজার,টমছমব্রীজসহ বিভিন্ন সড়কের উপর যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এছাড়া শহরের অধিকাংশ সড়কের ফুটপাতে বসছে দোকানপাট। চলাচলের রাস্তাটুকুও পাচ্ছেন না পথচারীরা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এছাড়া রাস্তা খোঁড়াখোঁড়ির ঝামেলাতো রয়েছেই। সিটি কর্পোরেশনের চলতি সড়ক উন্নয়নমূলক কাজের ধীরগতির কারণে একদিকে যেমন ধূলাবালির কষ্ট বাড়ছে অপরদিকে , রাস্তা এক মুখী হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এছাড়া ময়লা-আবর্জনা অপসারণ এবং ফেলার নির্ধারিত জায়গা ও পর্যাপ্ত আস্তাকুঁড়ের (ডাস্টবিন) অভাবে আবর্জনার স্তুুপ তৈরি হয়েছে যত্রতত্র। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সড়কে এসব পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। ময়লা থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট। নগরীর বৃষ্টির পানি দ্রুত নিস্কাশন না হতে পারায় বাড়ছে জলাবদ্ধতা। ড্রেন গুলো ক্রমেই সরু হচ্ছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে শহরের সড়ক ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। যানজটতো কুমিল্লা নগরবাসীর এখন দীর্ঘ দিনের সহপাঠি হয়ে আছে। শহরের এমন বিপর্যয় ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন নগরীর সচেতন মানুষ।
সম্প্রতি ইউএসএআইডির সহায়তায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত স্ট্রেন্দেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পের আওতায় এক কর্মশালায় এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পিত নগরায়ণের মধ্য দিয়ে দেশের প্রাচীন শহর কুমিল্লা উন্নত নগরীতে রূপান্তরিত হোক এমন প্রত্যাশা শহরবাসীর।
এদিকে, নগরবিদরা বলছেন, দ্রুতই কুমিল্লা নগর বড় হচ্ছে। বাড়ছে মানুষ, যানবাহন ও স্থাপনা । এতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা । তাই কাল বিলম্ব না করে কুমিল্লা নগরীকে একটি পরিকল্পিত নগরায়ণের আওতায় আনতে একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ বেশ জরুরি হয়ে পরেছে। মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনলে সুশৃঙ্খল নগরায়ণের পথ উন্মোচিত হবে। এক্ষেত্রে সিটি করপোর্রেশনের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
অন্যদিকে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে,‘সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, যানজট নিরসন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে। দৃষ্টি নন্দন ব্রিজ, নদী শাসন, ড্রেন নির্মাণ, রাস্তাঘাটের আধুনিকায়ন ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে নগরীর আধুনিকায়নে এক ধাপ এগিয়ে যাবে কুমিল্লা নগরী’।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম বলেন,‘পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে রেখেছি। এটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
পরিকল্পিত নগরায়ন গড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, বিগত মেয়র মনিরুর হক সাক্কুর ভুল প্ল্যানের কারনে সমগ্র সিটি এলাকা দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা , যানজট ও রাস্তাঘাট দূর-দশা সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীর পক্ষ থেকে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করবো শীঘ্রই। তার(সাক্কু) পুরাতন মাষ্টার প্ল্যানের কারনে শহরে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ‘পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য নতুন করে একটি মাস্টার প্ল্যান করেছি। নতুন বছরে আশা করি এ প্ল্যান পাস হবে ।

আরো পড়ুনঃ