নেকবর হোসেন, সংবাদদাতা জানান,
কুমিল্লার চান্দিনায় ‘গত পৌরসভা নির্বাচনে সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম ভোট দিতে। কেন্দ্রে যাবার সময় দেখি মোড়ে মোড়ে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাকে দেখে তারা বললো চাচা বাড়ি চলে যান, কষ্ট করে কেন্দ্রে যেতে হবে না। যাক এরপরও সকল বাধা ডিঙিয়ে সকাল ১০টার দিকে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছালাম। গিয়ে দেখি আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এরপর হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি। শনিবার আবারও ভোটের তারিখ। এবার অন্তত নিজের ভোটটা নিজে দিতে চাই। শুনেছি এবার নাকি মেশিনে ভোট হবে। তারপরও সংশয়ে আছি নিজের ভোটটা নিজে দিতে পারবো কিনা’।
গতকাল (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার বিশ্বাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র এলাকায় কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব সামছুল হক।
আগামীকাল শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ওই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ভোটারই এখন নিজের ভোট নিজে দিতে পারা নিয়ে ভয় ও সংশয়ে রয়েছেন। যদিও নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা আশ্বাস হয়, কথার বাস্তবতা দেখতে চান ভোটের দিন।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ নির্বাচনে মেয়র পদে মাঠে ৫ জন নির্বাচন করলেও মূল লড়াইটা হবে ত্রিমুখী। হেবিওয়েট ওই তিন প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হোসেন ভূঁইয়া, জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী চান্দিনা বাজারের ব্যবসায়ী হাজী শামীম হোসেন ও ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপির দলীয় প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খাঁন।
এদের মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় কিছুটা নিরব থাকলেও ব্যাপকভাবে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন নৌকা ও জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বেশ কয়েকটি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুরু থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে তুলেছেন বিভিন্ন অভিযোগ। সেই হিসেবে বলা চলে নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ জগই। আবার অনেকের ধারণা সুষ্ঠু ভোট হলে জগের পানিতে ডুবতে পারে নৌকা!
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তবে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও পুরো নির্বাচনী এলাকাতেই প্রায় সকল মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার দেখা গেছে।
পৌরসভার ছায়কোট এলাকার বাসিন্দা ফজলুল করিম বলেন, গত ৫ বছরে পৌর এলাকার উন্নয়নের কথা শুধু মুখে মুখেই শোনা গেছে। কিন্তু একটু ঘুরলেই দেখবেন প্রতিটি সড়ক ক্ষত-বিক্ষত। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পৌরবাসী নূন্যতম নাগরিক সুবিধাও পায়নি। আমরা কথায় নয়, পৌরবাসীর জন্য বাস্তবে কাজ করবে এমন পৌর পিতা নির্বাচন করতে চাই। এজন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করছি।
বড় গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা হুয়ামুন কবির বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মানুষের জন্য কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। গত নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এবার নিজেরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চাই।
গতকাল বিকেলে নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হোসেন ভূঁইয়া ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে রাজি হননি। তবে পূর্বে তিনি বলেছেন, চারদিকে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ তাকে বেছে নেবে। তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী শামীম হোসেন বলেন, মানুষ এখন উয়ন্নয় ও পরিবর্তন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সবাই আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে বলবো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান করে মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিন।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহ আলমগীর খাঁন বলেন, গত নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিজের ভোটটাও নিজে দিতে পারিনি। চারদিকে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষ ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। তবে প্রশাসন আশ্বাস দিলেও এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণের আগের দু’দিন মানুষকে ইভিএম সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিবে। কোন অনিময় হলেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।