১. কোভিশিল্ড কি ভারতীয় ভ্যাকসিন?
-না! এটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ভ্যাকসিন রিসার্চ কেন্দ্র – জেনার ইনস্টিটিউটে ডেভেলপ করা অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন যার কমার্শিয়াল ম্যানুফ্যাকচারিং কন্ট্রাক্ট বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকার। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এস্ট্রাজেনেকার নামের প্রোডাক্ট AZD1222 ও এস্ট্রাজেনেকার লাইসেন্স নিয়ে সিরাম ইন্সটিটিউট কোভিশিল্ড নামে একই প্রোডাক্ট বাজারজাত করছে। শুধু বাংলাদেশ নয় – ধারণা করা হচ্ছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সারাবিশ্বের সাপ্লাই এর ৬০ % এর বেশি সাপ্লাই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকেই যাচ্ছে!
২. আমার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই – আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া ঠিক হবে?
-আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাক আর না থাক – ভ্যাকসিন নিন! ভ্যাকসিনের সাথে ডায়াবেটিসের কোন সম্পর্ক নেই! কিন্তু ডায়বেটিস এর সাথে করোনার সম্পর্ক আছে, ডায়াবেটিস থাকলে করোনায় মৃত্যুর হার বেশি! তাই ডায়াবেটিক রোগীদের ভ্যাকসিন নেয়া অতিবেশি জরুরি!
৩. আমার এজমা, হাঁচি, নাকে এলার্জি, সর্দি-কাশির ক্রনিক সমস্যা! আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া ঠিক হবে ?
-অবশ্যই! এই ধরণের এলার্জি ভ্যাকসিনে কোনো সমস্যা করবে না! অনেকের লাইফ থ্রেটেনিং এলার্জিক এনাফাইলেক্টিক শক হয় চিংড়ি মাছ ইত্যাদিতে৷ এই গ্রূপের মানুষজন সাথে একটা এপিনেফরিন ইনজেকশন রাখতে পারেন অথবা টিকা কেন্দ্রে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪. যাদের ইম্মিউন সিস্টেম উইক – যারা স্টেরয়েড, ইম্মিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধের উপর নির্ভরশীল অথবা যাদের বোন ম্যারো বা অন্যান্য ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট রিসিপিয়েন্ট – তারা কি এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন?
-হ্যা পারবেন! এই ধরণের রোগীদের করোনায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি! এরা ভ্যাকসিনের জন্য হাই প্রায়োরিটি গ্রূপ!
৫. ক্যান্সারের রোগী বা যারা কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি পাচ্ছেন তারা কি এই ভ্যাকসিন পেতে পারেন?
-অবশ্যই! করোনায় ক্যান্সারের রোগীদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি৷ ক্যান্সার রোগীদের সবার আগে গিয়ে ভ্যাকসিন নেয়া দরকার।
৬. ভ্যাকসিন নেয়ার পর অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে৷ আমি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন!
-এ ব্যাপারে শঙ্কার কিছু নেই। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১৪ কোটি মানুষ করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছেন! এখন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিনের কারণে একটি মৃত্যুও হয় নি! কেউ মারা যেতে পারেন ভ্যাকসিন নেয়ার কিছুদিন পর – কিন্তু ভ্যাকসিন এর কারণে না।
৭. অনেকে বলছেন, ভ্যাকসিন নিলে পুরুষত্ব চলে যায়, আবার অনেকে বলছেন এই ভ্যাকসিনের প্রভাবে বাচ্চা কাচ্চা নাও হতে পারে!
-এগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও বাজে কথা! এর মধ্যে সত্যের লেশমাত্র নাই!
৮. আমার এক মাস আগে করোনা হয়েছিল – আমি কি ভ্যাকসিন নেবো?
-অবশ্যই! করোনা হোক আর না হোক, যত আগেই করোনা হোক, এক মাস হোক আর এক বছর হোক, আপনি ভালো হয়ে গিয়েছেন – ভ্যাকসিন নিন! এমন কি প্রথম ডোজের পর করোনা হয়েছে – তারপরও দ্বিতীয় ডোজ নিন। তবে করোনা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় টিকা কেন্দ্রে গেলে অন্যান্যদের সংক্রমিত করার সম্ভাবনা। তাই সুস্থ হবার পর ইনফেকসাস পিরিওড শেষ হবার পর দ্বিতীয় ডোজ নিন।
৯. করোনা ভ্যাকসিন থেকে কি করোনক হতে পারে?
– না!
১০. করোনক ভ্যাকসিন নিলে কি এর প্রভাবে পরে করোনা টেস্ট পজিটিভ আসতে পারে?
– না!
১১. প্রেগন্যান্ট বা নার্সিং মা রা কি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন ?
– হ্যা পারবেন! (অনেক সরকারি সাইট বলছে ডাক্তারের পরামর্শ নিন! আমার পরামর্শ : আমি হ্যা বলছি! যুক্তরাষ্ট্রে প্রেগন্যান্ট হেলথ কেয়ার ওয়ার্কাররা সবাই এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। হাজার হাজার!
একটা সরকার ও সংগঠনের অনেক আইনী সীমাবদ্ধতা থাকে – তাই কিছু ক্ষেত্রে বলতে হয় আপনারা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। সরকারগুলো সরাসরি ‘হ্যা’ বলছে না – কারণ ফেইজ থ্রি ট্রায়ালে প্রেগন্যান্টদের ইনক্লুড করা হয় নি।
কিন্তু সব প্রিক্লিনিকাল স্টাডিতে দেখা গেছে এই ভ্যাকসিন প্রেগন্যান্সিতে পুরোপুরি সেইফ! আমরা অনেক ঔষধ ব্যবহার করি শুধুমাত্র প্রিক্লিনিকাল স্টাডির উপর ভিত্তি করে)।
১২. আমার বাচ্চাদের কি হবে? ওদের কি ভ্যাকসিন নিতে হবে?
-এই মুহূর্তে শুধু ১৬-১৮ বছরের উপরের বয়স যাদের তাদের জন্য ভ্যাকসিন অনুমোদিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী শীতে বাচ্চারাও ভ্যাকসিনের আওতাভুক্ত হবে!
১৩. অনেকে বলছে এই ভ্যাকসিন আমাদের ডিএনএ আর জিন পরিবর্তন করে দিতে পারে?
-সম্পূর্ণ অমূলক! পুরোপুরি ভিত্তিহীন, বাজে কথা!
১৪. করোনা ভ্যাকসিন ৬৫ বছরের বেশী বয়সীদের জন্য কতটুকু কার্যকর?
-এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়ার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওহো) টেকনিক্যাল কমিটি বিভিন্ন বয়সওয়ারী এর কার্যকারিতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৬৫ বছরের বেশী বয়সীদের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিন কার্যকর।
[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো রিজিওনাল হেলথ সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ট্রেনিং পরিচালক]