কুমিল্লায় শেষ সময়ে চাহিদা বাড়লেও দাম কমেছে প্রতিমার

 

নেকবর হোসেন।

আগামী মাসে ১১ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা। হাতে মাত্র কিছুদিন বাকি। করোনা মহামারিতে লকডাউন থাকা না থাকা নিয়ে আগ থেকেই তেমন প্রস্তুতি ছিলো না অনেকের।

লকডাউন উঠে গেলে পূজার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে অনেকেই। শেষ সময়ে প্রতিমার চাহিদা বাড়লেও দাম কমেছে প্রতিমার।

প্রতিমা কিনতে প্রতিমা বিক্রেতার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পূজা আয়োজকরা। তবে হাতে সময় কম থাকায় প্রতিমার অর্ডার নিচ্ছেন না অনেক কারিগর। এ নিয়ে অস্বস্থিতে রয়েছে আয়োজকরা।

নগরীর ঠাকুরপাড়ার কালীগাছতলা মন্দিরের আঙিনায় প্রতিমা তৈরী করেন রমেশ পাল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবারই দূর্গাপূজার শেষে অনেকেই পুনরায় প্রতিমার অর্ডার দিয়ে দেন। অনেকেই পূজার ৩/৫ মাস আগে অর্ডার দেন।

তখন আমরা আমাদের মনের মত করে এগুলো তৈরী করি কিন্তু গতবার করোনার কারনে এই দুই বছর সব এলামেলো। অনেকেই ভেবেছিলো পূজায় লকডাউন থাকবে, যে কারণে অনেকেই আগে থেকে প্রতিমার কথা বলেন নি।

এবার লকডাউন ছেড়ে দেয়ায় হুট করে অনেকেই প্রতিমা বানানোর কথা বলছেন। প্রতি পূজোর জন্য দূর্গা, লক্ষী, স্বরসতী, গনেশ, কার্তিকসহ কয়েকটি দেবতা নিয়ে একটি মন্ডপ তৈরী হয়।

এত অল্প সময়ে এসব প্রতিমা বানানো খুব কষ্টকর। প্রতিমা কারিগর সংকর পাল বলেন, অন্যান্যবার সময় নিয়ে আমরা কাজ করতাম।

এবার শুরুতে তেমন কাজ ছিলো না। লকডাউন উঠে গেলে হুট করেই প্রতিমার চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা থাকলেও আমরা অর্ডার নিতে পারছিনা না, সময়মত সরবরাহ করতে পারবো না বলে।

যাদের অর্ডার নিয়েছি তাদেরগুলো সময় মত বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করছি। প্রতিমা কারিগর সুকুমার পাল বলেন, চাহিদা রয়েছে অনেক কিন্তু কম দামে প্রতিমা চান সবাই ।

গতবার যে প্রতিমা ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, সেটা দাম দিতে চাচ্ছে ২০ হাজার টাকারও কম। প্রতি প্রতিমায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে প্রতিমা বানানোর কাঁচামালের দাম তো কমেনি।

নগরীর কান্দিরপাড়ের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠিনের চাকুরীজীবি বিপুল কুমার রায় বলেন, করোনা মহামারির কারনে মানুষের অবস্থা তেমন ভালনা। আগে পাঁচ দিনের পূজার ছোট আয়োজনে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হতো।

এখন তা কমিয়ে দুই লক্ষ টাকায় আনা হয়েছে। আগে আমি পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি। এবার দিলাম তিন হাজার টাকা। সীমিত বাজেট দিয়ে শেষ করতে হবে পূজোর আয়োজন।

নগরীর ঠাকুরপাড়া পালপাড়ার দূর্গা পূজার আয়োজক পাগল সংঘের সহ-সভাপতি তপন পাল বলেন, আগামী ৮, ৯, ১০ ও ১১ অক্টোবর হচ্ছে শারদীয় পূজা। প্রতি বছরই পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা বাজেট নিয়ে দূর্গা উৎসব করা হয়।

এবার করোনায় লকডাউন উঠে যাওয়ায় আমরা পূজোর আয়োজন করছি। তবে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারনে হয়তো কম বাজেটে তা করতে হবে। পূঁজোর চাঁদা যাই উঠোক বাকি টাকা আমরা দিয়ে সুন্দরভাবে পুজা সম্পন্ন করবো আশা করি।

কালী গাছতলা কালী বেদী ও শিবের মন্দির পরিচালনা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরুন চক্রবর্ত্তী বলেন, গতবারের চেয়ে এবার পূজার চাহিদা বেড়েছে। লকডাউন উঠে যাওয়ায় গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই বেড়েছে প্রতিমার চাহিদা।

একসাথে এত প্রতিমা তৈরী নিয়ে হিমশিমই খেতে হচ্ছে কারিগরদের। দামে না মেলায় অনেকেই ছোট আকৃতির প্রতিমা বানানোর জন্যও বলছেন কারিগরদের।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল জানান, গতবছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসব সীমিত করা হয়েছিলো। পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ৭২৯টি মন্ডপে। এবার সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

আরো পড়ুনঃ