শান্তনু হাসান খান:
সদ্য সমাপ্ত বছর ২০২০- এতে দেখা যায় কুমিল্লা জেলাতে আশঙ্খাজনক হারে অপরাধ দিন দিন বেড়েছে। এর মাঝে কুমিল্লা সদর কোতয়ালী থানার অপরাধ পরিসংখ্যানে রয়েছে প্রথম। আর দাউদকান্দি থানা দ্বিতীয় স্থানে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা ৩য় স্থানে অবস্থান করছে। ডিসেম্বর মাসে এবং আগের দু’মাসে কুমিল্রার ১৭টি উপজেলার ১৮টি থানায় অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে ৮ ধরনের। এর মাঝে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন রকমের অপরাধ সংগঠিত হয়।
বর্তমান কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এ বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে কতগুলি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন এবং কুমিল্লাতে অপরাধ বিষয় জিরো টলারেন্স এনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। নবাগত পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে বলেন, স্বল্প সংখ্যক পুলিশ বাহিনী দিয়ে গোটার জেলার অপরাধ প্রবণতা কমানো সম্ভব নয়। জনসংখ্যা অনুযায়ী পুরো জেলাতে ১২শত মানুষের জন্য মাত্র ১জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা রাখেন। স্বাভাবিক কারণে এই রেষিওটা ধরে রাখা খুবই দুষ্কর। আমি চাইবো- পুরো জেলাতে পুলিশ কে সাহায্য করার জন্য সর্বস্তরের জনগণ সহযোগীতা করবেন। পুলিশকে সহযোগীতা না করলে প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরন এবং প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ জনগণের সেবক। তার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে, পুলিশ থেকে সাহায্য নেওয়ার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কিছু অনিয়মের কথা উঠে আসে। সেটা থেকে জনগণকে মুক্ত রাখতে চাই।
সম্প্রতি জেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাতে তথ্য উঠে এসেছে, কুমিল্লা জেলাতে মোট ৪৪৯টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। গত নভেম্বরে ৩৭০টি আর অক্টোবরে ৪২৩টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে জেলার ১৭টি উপজেলাতে। এর মাঝে খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি-ছিনতাই সিঁদেল চুরি, চোরা চালানও মাদক অপরাধ অন্যতম ছিল। গত ডিসেম্বরে কোতয়ালী থানায় সংগঠিত ৬৩টি অপরাধের মধ্যে রয়েছে চাঞ্চল্যকর ২টি খুনের মামলা। এছাড়াও নারী শিশু নির্যাতনের মামলা ৫টি। অপর দিকে দাউদকান্দিতে ঘটেছে ৫১টি অপরাধ। ওখানে খুন হত্যা না হলেও ধর্ষন, নারী ও শিশু নির্যাতন আর অপহরনের মত ঘটনা। প্রতিটি থানাতেই কমবেশী মাদকের মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে সীমান্তের বিজিবি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের আলাদা আলাদা মামলা হচ্ছেও। কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ ও দাউদকান্দি ছাড়া চৌদ্দগ্রামে অপরাধ সংগঠিত হয় ২৭টি। নাঙ্গলকোর্ট থানায় ১২টি, লাকসামে ১টি খুন সহ ৯ টি মামলা। মনোহরগঞ্জে ৯টি। বুড়িচং থানায় ৩১টি। ব্রাক্ষণপাড়ায় ৩৬টি। বড়–রায় ২৮টি। চান্দিনায় ৩৬টি। তিতাসে ২৬টি। মেঘনায় ৮টি। হোমনায় ৭টি। মুরাদনগরে ২৭টি। দেবিদ্বারে ১৯টি এবং নবগঠিত লালমাই থানাতে ১১টি মামলা রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডিসেম্বরে ৫টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মাঝে পিস্তল, পাইপগান, এলজি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, অপরাধ দমনে পুলিশ কাজ করছে নিয়মিত। কুমিল্লা আমার জন্য একটি নতুন জেলা। এই জেলাকে অপরাধ মুক্ত রাখার জন্য চেলেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। জনগনের তুলনায় পুলিশ অপ্রতুল। তাই আমি জনগণের সহযোগীতা কামনা করছি।
আইন-শৃঙ্খলা সভাতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবু ফজল মীর বলেন, অপরাধ দমনে আর কুমিল্লা শহরের সড়ক ও ফুটপাত দখল, সরকারী সম্পত্তি বেদখল ও গোমতী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন, লালমাই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যহত রয়েছে। তিনি বলেন, শহরের বাজার গুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমার প্রশাসনসহ মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা চাই, জনগণ আমাদের কে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত প্রদান করে সহযোগীতা করবেন।