মনোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্ল)।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হাটবাজারগুলোতে ভুয়া ডাক্তার ও ভারতীয় নিষিদ্ধ ঔষধের ছড়াছড়িতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। যত্রতত্র পাওয়া যাচ্ছে বাজারে বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারী ঔষধ। চলছে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার চৌদ্দগ্রাম বাজার, মিয়াবাজার, নোয়াবাজার, বাবুচি বাজার, আমানগন্ডা বাঁকা বটগাছ রাস্তার মাথা, হাড়িসর্দার বাজার, বাতিসা রাস্তার মাথা, চিওড়া রাস্তার মাথা, কাজীর বাজার, পদুয়া রাস্তার মাথা, পদুয়ার বাজার, আলকরা বাজার, গুনবতী বাজার, চৌধুরী বাজার, ধোড়করা বাজার, কনকাপৈত বাজার, তারাশাইল বাজার, করপাটি বাজার, একতা বাজার, দেড়কোটা রাস্তার মাথা, খিরনশাল বাজার, মুন্সীরহাট বাজার, কাদৈর বাজার, উনকোট বাজার, নালঘর বাজার, ধনিজকরা বাজার, মদীনা মার্কেট, চৌমুহনী বাজার, রাজার বাজার, কাশিনগর বাজার সহ বিভিন্ন বাজার ও জনবহুল স্থানে ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এসকল হাতুড়ে ডাক্তারদের অপচিকিৎসার কবলে পড়ে শিশু ও গর্ভবতী নারী সহ অকালে ঝরে গেছে অনেক মূল্যবান প্রাণ। গ্রামের সহজ-সরল সাধারণ মানুষ ডাক্তার নাম শুনলেই চিকিৎসার জন্য দৌড়ে চলে যায়।
এসব ডাক্তারদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার সহ কিডনী, লিভার, হার্টের সমস্যা সহ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকেই। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে এসব সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোনো প্রকার সার্টিফিকেট না থাকলেও ৪৫ বছরের অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাবুচি বাজারস্থ মাহবুবুল হক নামে সাইনবোর্ডবিহীন বাত-ব্যাথা ও যৌন রোগের বিশেষজ্ঞ এক ভুয়া ডাক্তারের চেম্বারে রোগি সেজে চিকিৎসা নিতে যান সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান মিয়াজী।
এসময় সহযোগিতায় ছিলেন আনন্দ টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিনু ও ভোরের সূর্যোদয়ের সাংবাদিক মেহরাব অপি সহ স্থানীয় ভুক্তভোগি সাধারণ মানুষ।
ভুয়া ডাক্তার মাহবুব ছদ্মবেশি রোগিকে প্রথমে বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারী হাসাপতালের সিপ্রোসিন-৫০০, ভারতীয় যৌন রোগের ঔষধ টার্গেট-২০০, বায়াগ্রার আদলে তৈরী সেনেগ্রা-২০০, যৌন উত্তোজক ফাইটেক্স, কফেক্স ও অ্যাফেক্স সিরাপ, ট্যাবলেট মুনইশ, অনুমোদনহীন ক্যালফ্রেশ ট্যাবলেট ও ডেকাডোরাভলিন গ্রুপের ইনজেকশন সহ সর্বমোট ১৮০০ টাকার ঔষধ প্রদান করেন।
ঔষধের মূল্য ১৮০০ টাকা নিয়ে ভুয়া ডাক্তার এবং ছদ্মবেশি রোগির মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে টিমের অন্য সাংবাদিকরা এগিয়ে এসে ভিডিও চিত্র ধারণ করার সময় ভুয়া ডাক্তার মাহবুব মসজিদে আসরের আজান দেয়ার কথা বলে কৌশলে সটকে পড়েন।
এসময় বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ীগণ ভুয়া ডাক্তার মাহবুবকে খুঁজে নিয়ে এসে উপস্থিত করলে সকলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারে।
পরে উত্তেজিত জনতা অভিযোগের সুরে বলেন, তার অপচিকিৎসার ফলে বিভিন্ন সময় এলাকার অনেক মূল্যবান প্রাণ চলে গেছে। এসময় তারা তার উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসিবুর রহমান জানান, সরকারী ঔষধ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ বিক্রি করে থাকে তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপরোল্লেখিত ঔষধের ব্যাপারে তিনি বলেন, ঔষধগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো সেবনের ফলে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক বলেন, সরকারী ঔষধ মার্কেটে পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।