জেলা পরিষদ নির্বাচন: কুমিল্লা নৌকার প্রার্থী মফিজুর রহমান বাবলু

 

স্টাফ রিপোর্টার।।

কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মফিজুর রহমান বাবলুকে এই মনোনয়ন দেওয়া হয়।

রাইজিংবিডিকে মোবাইল ফোনে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা মফিজুর রহমান বাবলু।

মনোনয়নের খবর চাউর হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন তিনি।

একেএম বাবুল ছাড়াও সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহেরসহ প্রায় ডজনখানিক নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। মনোনয়ন না পেলে অন্য কয়েক জন দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বাবুল তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও রেডক্রিসেন্টের সহসভাপতি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামলীগের মনোনয়ন পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এলজিইডি মন্ত্রী মমতাজুল ইসলাম ও কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব এমপি।

বর্ষীয়ান রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু ১৯৪৬ সালের ১০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত আইনজীবী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মফিজুর রহমান বাবলু তার মামা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি কাজী জহিরুল কাইয়ুমের হাত ধরে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে রাজনীতির পথে পা বাড়ান।

তারপর ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন অবিভক্ত কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সে সময় জাতির পিতা ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা আন্দোলনে অংশ নেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে অংশ নেন ডাকসুর সদস্য হিসেবে। সত্তরের নির্বাচনে দলের হয়ে কাজ করেন। অংশ নেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদকের। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৮২ ও ১৯৮৮ সালে দলীয় কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টির নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মফিজুর রহমান বাবলু ছিলেন ২ নাম্বার সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা।

আগরতলার রাধানগরে যুব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় চৌদ্দগ্রামে তার নিজের বাড়িটি ছিল মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন সময়ে সেখানে বৈঠকে মিলিত হতেন। তার আরেকটি পৈতৃক বাড়িসহ এ দুটি বাড়িতে প্রায়ই পাকিস্তানি বাহিনী হানা দিত। একপর্যায়ে পাকিস্তানিরা একটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা বাবলুর চার চাচা সেই আগুনে শহীদ হন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি মফিজুর রহমান বাবলু নিজেকে জড়িয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিনেট সদস্য কুমিল্লা ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন ও কুমিল্লা ক্লাবের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল, কুমিল্লা লায়ন্স ক্লাব, কুমিল্লা কালচারাল কমপ্লেক্সের সঙ্গে জড়িত বাবলু কুমিল্লা শহর ও চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন।

উল্লেখ্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৪৯ জন এবং নারী ৬২৭ জন। এদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান ও জেলার ১৭টি উপজেলায় সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৬ জন নির্বাচিত হবেন।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৮ সেপ্টেম্বর।

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপিল করা যাবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর।

আরো পড়ুনঃ