বিশেষ প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার বরুড়ার ভাউকসার ইউনিয়নে চুরির অভিযোগে যুবকের উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার নথিতে বাদী উল্লেখ করেন “জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি” আদায় করতে ওই যুবককে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের শিকার ওই যুবক মামলাটি দায়ের করেছে। মামলায় সাতজন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন।
ওসি ফিরোজ জানান, শনিবার (২৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের চৌত্তা পুকুরিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। পরদিন রবিবার (২৭ আগস্ট) ইউপি সদস্যসহ সাতজন নামীয় ও পাঁচজন অজ্ঞাতনামাসহ মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে নির্যাতনের শিকার যুবক। এ ঘটনায় আমরা ইউপি সদস্যসহ এজাহারনামীয় মো. নুরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরপে জহির মেম্বার ও মৃত রজ্জব আলীর ছেলে নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান।
মামলার প্রধান আসামি শৈলখালী মাদ্রাসা বাড়ির গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরপে জহির মেম্বার (৩৪)। অন্য আসামিরা হলেন, আব্দুল খালেকের ছেলে শাহ পরান (২৮), চৌত্তাপুকুরিয়ার আ. মতিনের ছেলে ইয়াছিন (৩০), মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে মোঃ রিমন (২৬), মৃত সেকান্দর আলীর ছেলে মোঃ মিজান (৪৫), মৃত রজ্জব আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৪২), নুরুল ইসলানের ছেলে মোঃ সোলাইমানসহ (২৮) অজ্ঞাতনামা ৫ জন।
মামলার নথিতে বাদী হান্নান উল্লেখ করেন, শনিবার সকালে ভাউকসার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহিরুল ইসলাম ওরপে জহির মেম্বারের নেতৃত্বে ইউনিয়নের চৌত্তা পুকুরিয়া এলাকায় স্থানীয় আব্দুল জব্বারের ছেলে আবদুল হান্নানকে(৩২) বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়। পরে চুরির অভিযোগ তুলে স্থানীয় নুরুল ইসলামের চা দোকানের ব্যাটারি চুরির বিষয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে তাকে বেদম মারধর করে। স্থানীয় ইয়াছিন ও মোঃ রিমন তার পায়ের কাছে বাঁধা রশি ধরে রাখে। জহির মেম্বার, রিমন, মিজান, নুরুল ইসলাম ও সোলাইমানসহ কয়েকজন তাকে আঘাত করে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।ভাইরাল হওয়া ৫৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, চুরির অভিযোগে হাত পা বেঁধে হান্নানকে উল্টো করে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। এ সময় হান্নান ‘মরে যামুতো, আমি মরে যামু, আমারে বাঁচান’ বলে চিৎকার করছিল। চারপাশে উৎসুক জনতা বিষয়টি দেখছিল।
নির্যাতনের শিকার হান্নানের বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জহির মেম্বার সকালে আমাকে কল দিয়ে বলেছে সে (হান্নান) ব্যাটারি চুরি করেছে তাই তাকে আটক করেছে। আমরা যেন ঘটনাস্থলে যাই। আমি বলেছি যদি আমার ভাই অভিযুক্ত হয় আপনারা আইনের হাতে তুলে দেন। আমার ভাইকে এভাবে মারতে বলিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও কুমিল্লা জজ কোর্টের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মাযহারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই ঘটনার ভিডিওটি আমি দেখেছি। শুধু একজন ইউপি সদস্য নন কেউই এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। এটি অপরাধ। যদি কেউ অভিযুক্ত হন, তাহলে তার বিচার করবে আদালত। সন্দেহ করেও কাউকে এভাবে নির্যাতন করার কোন বৈধতা নেই। ভিডিওতে যা দেখলাম, অভিযুক্ত ওই যুবককে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই ঘটনায় ৩২৫ ধারায় মামলা হতে পারে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে।