কুমিল্লা পরিকল্পনা বিভাগে নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে দুই ভাই। বদলি হয়েও কলকাটি নাড়া বন্ধ নেই তাদের।
গোপন সূত্রে জানাযায়, বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের নাগিরপাড় গ্রামের এক সময়ের দরিদ্র ছোয়াব আলী পাটোয়ারীর দুই ছেলে কবির হোসেন পাটোয়ারী ও কাউছার হোসেন পাটোয়ারী কুমিল্লা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে একটানা ৩৩ বছর ও আদর্শ সদর অফিসে ১৫ বছর কর্মরত তার ছোট ভাই কাউছার হোসেন পাটোয়ারী অবশেষে বদলি হয়েছে । তবে এখনো এ দুই ভাইয়ের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। নিজের ৫ ভাই বোন সহ ১৫/২০ জন আতœীয়কে কুমিল্লা প: প: বিভাগে চাকুরি দেয়া সহ নিয়োগ বানিজ্য, বদলী বানিজ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগে উভয়কে বদলি এবং তদন্তের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জেলা অফিসের কবির হোসেনকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ১১জুলাই লক্ষীপুরে এবং আদর্শ সদর অফিসের কাউছারকে প্রথমে ২৩জুলাই তারিখে কুমিল্লার উপ-পরিচালক চান্দিনায় এবং পরে ৩১জুলাই অধিদপ্তর হতে চাঁদপুরের কচুয়ায় বদলি করে স্টান্ডরিলিজ করা হয়। কিন্ত অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে নির্ধারিত তারিখে যোগদান না করলেও তার বদলির আদেশটি ৮আগস্ট বাতিল হয়ে যায়। ফলে সে চান্দিনায় অদৃশ্য খুঁটির জোরে বহালতবিয়তে রয়ে গেছে। শুধু তাই নয় এর আগে গত ৫জুলাই অধিদপ্তর হতে তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য কুমিল্লার সাবেক ও বর্তমানে চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আবুল কালামকে দায়িত্ব দিয়ে চিঠি ইস্যু হওয়ার পরপরই ১১জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস থেকে কবিরের বদলি হয়। এ বদলিতে আবুল কালাম সাহেবের সহায়তার কথা চাউর রয়েছে।
জানা গেছে আবুল কালাম কুমিল্লার ডিডি থাকাবস্থায় অফিসের গেস্ট রুমে সিঙ্গেল থাকতেন এবং এ দুই ভাইয়ের আতিথ্য গ্রহন করতেন। সেই সুবাদে তাদের প্রতি দায়বদ্ব ছিলেন। বর্তমান উপপরিচালক ও একইভাবে তাদের করায়ত্বে আছেন। তিনিও জেলা অফিসের গেষ্ট রুমে সিঙ্গেল থাকেন এ সুযোগে উক্ত দুভাই তাকেও কবজা করে নিয়েছেন। তাদের অদৃশ্য আঙ্গুলি হেলনেই কুমিল্লায় বদলি সহ বিভিন্ন কার্যক্রম হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কিছু বদলির ক্ষেত্রে দুই ভাইয়ের অপচন্দের কর্মচারিদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যত্র সরানোর অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের নাগিরপাড় গ্রামের এক সময়ের দরিদ্র ছোয়াব আলী পাটোয়ারীর ছেলে কবির হোসেন পাটোয়ারী ১৯৮৯সালের ২৬ নভেম্বর অফিস সহকারী পদে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। তার আপন ছোট ভাই কাউছার হোসেনকে ২০০৮ সালে চাকরি পাইয়ে দিয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর অফিসে পোস্টিং দেন এবং সেই থেকে উভয়ে মিলে নানান কলাকৌশল ও ফন্দিফিকির চালিয়ে অর্থ বিত্তে ফুলে ফেপে উঠছে তারা। এই কবির হোসেন পাটোয়ারী ২০১০ সালের ১৮ই মার্চ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৮৭৫নং স্মারকে উচ্চমান সহকারী পদে পদোন্নতি পেয়ে লক্ষীপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে পোস্টিং পান কিন্ত সে লক্ষীপুর না গিয়ে কুমিল্লা অফিসে তার উচ্চমান সহকারীর পদটি না থাকা সত্তেও অদৃশ্য খুঁটির জোরে অন্য একটি পদে পদায়ন নিয়ে রয়ে যান। এবার বদলি হলেও কার্যত সে কুমিল্লাই রয়েছে। তার বাসা কুমিল্লা শহরে এবং তাকে প্রায়ই কুমিল্লা শহরে দেখা যায়। এখনো কুমিল্লার বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রভাব বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ভাইকে নিকটবর্ত্তী চান্দিনায় বদলির পূর্বে ডিডি সাহেবকে বিভ্রান্ত করে সদর দক্ষিণ উপজেলায় বদলি করায়। কিন্ত চট্টগ্রামের পরিচালক এতে বাদ সাধলে কিছু সময় পরই একই স্মারক ও তারিখে প্রতিস্থাপিত লিখে আদেশটি পরিবর্তন করে চান্দিনায় করা হয়। শুধু তাই নয় একই আদেশের অপর ৪জনের ৩জনকেই অজ্ঞাত কারণে বদলি করিয়ে তারা ক্ষমতার প্রমাণ দেখিয়েছে। তাদের পক্ষের লোক কামরুজ্জামানকে মাত্র দেড় মাসের মাথায় চৌদ্দগ্রাম হতে আদর্শ সদর অফিসে বদলি করা, কাউছারকে সুযোগ করে দিতে চান্দিনার নারী কর্মী শান্তনাকে সরানো এবং কাউছারের কচুয়ায় যোগদান ঠেকানোর কুটকৌশল এরই নমুনা। এছাড়া কাউছার বদলি হয়ে চান্দিনা গেলেও সে অদ্যাবধি জেলা অফিসের এফপিসিএসকিউআইটি শাখার কর্মচারিকে বাইপাস করে এঅফিসের হিসাব সংক্রান্ত সকল কাজ কর্ম এখনো নিজের দখলে রেখে দিয়েছে।
অন্যদিকে কাউছার চান্দিনায় যোগদান করেই ঐ অফিসের সাগর ও মাহবুবকে সদর দক্ষিণ এবং দেবিদ্বারে বদলি করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহির করেছে। এদিকে গত ১৯জুলাই চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালকের দেবিদ্বারে এক তদন্ত অনুষ্ঠানে জিপিএফ এর টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ৫হাজার টাকা করে কবির নিয়েছে বলে প্রমান পাওয়া গেছে। খোঁজ খবর নিলে প্রতিটি উপজেলা হতে এরুপ আরো প্রমাণ পাওয়া যাবে। সেই কবির আবারও ডিডি ডাইরেক্টরদের ম্যানেজ করে কুমিল্লায় ঢোকার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক কর্মর্কতা জানায়, ইতোপূর্বে তারা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য, ব
প্রতিষ্ঠানটির অপর এক কর্মকর্তা জানায়, স্বজনপ্রীতির জন্য যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা।
এবিষয়ে কবির হোসেন পাটোয়ারী তার পরিবারের চার জনের চাকরির কথা স্বীকার করে জানায়, সে এক অফিসে র্দীঘদিন কাজ করলেও কোন ধরনের অপরাধ বা দূর্নীতি করেনি বলে দাবি করে। তার ছোট ভাই কাউছারও একজন ভালো মনের মানুষ দাবি করে এসকল অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এবিষয়ে কুমিল্লা জেলার উপ-পরিচালক এটিএম নাজমুল হুদা জানান, কবির হোসেন পাটোয়ারী ও কাউছার হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিরকে লক্ষিপুর এবং কাউছারকে চান্দিনায় বদলি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে, অভিযোগ প্রমানীত হলে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।