কুবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মীসভা, নেতৃত্বে আসার আলোচনায় যারা

আব্দুল্লাহ, কুবি প্রতিনিধি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের (ইলিয়াস-মাজেদ) কমিটি বিলুপ্তির সাত মাস পর কর্মীসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। আগামী ৯ অক্টোবর (সোমবার) এ কর্মীসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কর্মীসভাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও বাইরে কর্মীদের নিয়ে আড্ডা, মিটিং, ব্যানারসহ নানা কার্যক্রমে মেতে উঠেছে কুবি শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী।

গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অনেকের নামই আসছে আলোচনায়। এ তালিকায় আছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-ইলাহী, বিগত কমিটির সহ সভাপতি এইচ. এম. মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মু. রকিবুল হাসান রকি, মো. ইকবাল হোসেন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমান হোসেন মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসাইন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সভাপতি ইসরাত জাহান জেরিন, ছাত্রলীগ নেতা তাহারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিন শুভ, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সালমান চৌধুরী, আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সিফাত, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুর বিশ্বাস সহ আরো অনেকে। তবে কে কোন পদের প্রত্যাশা করছেন সেটি তারা প্রতিবেদকের কাছে স্পষ্ট করেননি।

কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহ সম্পাদক রেজা-ই-ইলাহী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃত্বে বাছাই করবে যোগ্যতা, দলীয় মতাদর্শ, সেক্রিফাইজ, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে দলের প্রতি কতটুকু নিবেদিত এই বিষয়গুলো দেখে এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতামত নিয়ে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব বাছাই করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যদি আসতে পারি প্রথমে সাধারন শিক্ষার্থীদের যেন ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠ থাকে, বিশৃঙ্খলা না হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে যেকোনো সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো। দলীয় রাজনীতির কথা চিন্তা করলে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় রাখতে পারি সেই অনুযায়ী যে নির্দেশনা আসবে সেগুলো করবো। আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করবো।’

বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপশক্তির মাথাচাঁড়া দেওয়া রোধ করবো৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২১ এবং ৪১ এর মিশন ও ভিশন, সেই সাথে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে স্মার্ট ছাত্রলীগ গঠনে কাজ করে যাবে৷ পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই বিষয়েও আমরা কাজ করে যাব।’

বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মু. রকিবুল হাসান রকি বলেন, ‘জাতির জনকের আদর্শ ধারণ করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে স্মার্ট সিটিজেন তৈরী করতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য সর্বদা রাজপথে সোচ্চার থাকবো।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সহ সভাপতি এইচ. এম. মেহেদী হাসান বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। আ.লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান দেশী-বিদেশী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকেবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তারুণ্যের ভোট ব্যাংক যাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষে যায় সে লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিগত ১৫ বছরের শিক্ষাবান্ধব উন্নয়নমূলক কাজের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।’

ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল হোসাইন খান বলেন, ‘নেতৃত্ব স্থানে যাওয়ার সুযোগ হলে আমি, আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.এফ.এম. আবদুল মঈন স্যার এবং প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাব।’

বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘শিক্ষা, শান্তি ,প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মৌলিক এবং যৌক্তিক দাবি আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার সোচ্চার থাকবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ । বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।’

কাজী নজরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসাইন বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রত্যাশা, গঠনতন্ত্রের বাইরে থেকে যেন নেতৃত্ব না আসে। যারা শিক্ষার্থীবান্ধব এবং স্মার্ট বাংলাদেশের যে ঘোষনা শেখ হাসিনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে যারা ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় দক্ষতার সাথে কাজ সেই বিষয়গুলো দেখা। যারা শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে চায় তাঁরা নেতৃত্বে আসুক। নেতৃত্বে তাঁরাই আসুক যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজকতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিরসনে কাজ করবে।’

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান জেরিন বলেন, ‘আসছে ৯ অক্টোবর দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীসভা আয়োজিত হতে যাচ্ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই কর্মীসভা নিয়ে উত্তেজনা পূর্ণ মনোভাব বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ সময় পর নতুন নেতৃত্ব দেখতে যাচ্ছে বলে আশাবাদী সকলেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কমিটির একজন পদপ্রত্যাশী হিসেবে আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে এবং যারা ২০১৭ এর কমিটির পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে, রাজপথে যাদের বিরামহীন পদচারণা ছিল তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব উঠে আসুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার মানসিকতা সম্পন্ন কেউ নেতৃত্বে আসুক। ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে ছাত্ররাজনীতিকে ব্যবহার করার মানসিকতা নিয়ে কেউ নেতৃত্বে না আসুক।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি নেতৃত্বে আসতে পারলে প্রথমেই নারীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নারী নেতৃত্ব তৈরিতে কাজ করবো। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সে সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করবো। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু, সুন্দর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত এবং সুশৃঙ্খল ক্যাম্পাস বিনির্মানে মাননীয় উপাচার্য মহোদয় এবং প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবো।’

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের কমিটিতে এমন শিক্ষার্থীদের চাই, যারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে, সাধারন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছে, ছাত্রদের জন্য কাজ করছে। এই ক্যাম্পাস যেন অস্ত্রাগার না হয়ে ফুলের বাগান হয়। তাছাড়া ভবিষ্যত নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা শেখ হাসিনার আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে পারবে। নির্বাচনে নৌকা যেন পাস হয় সেই লক্ষে কাজ করবে তাদের মধ্য থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত নেতৃত্ব যেন বাছাই করে।’

কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যারা এখানে রাজনীতি করেছি আমরা চাই যোগ্য, স্মার্ট, মেধাবী, সাংগঠনিক এমন কাউকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ নির্বাচন করুক। যাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং যারা নেতৃত্বে এলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পারবে, ছাত্রলীগের কর্মী বাড়বে এমন কাউকেই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ নির্বাচন করবে বলে আমাদের আস্থা আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম এতদিন সকলেই দেখেছে, আমি যদি আসি তাহলে আমি চেষ্টা করবো সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে যেন কোন দূরত্ব যেন না থাকে। প্রতিটি সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী যেনো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারে, প্রতিটি সাংস্কৃতিকসহ অন্যান্য যত ছাত্র সংগঠন আছে সেগুলো যেন একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারে সেই চেষ্টা করবো।’

ছাত্রলীগ নেতা তাহারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজী বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে যারা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে গঠনমূলক প্রগতিশীল চর্চায় সম্পৃক্ত ছিলো তাদের থেকেই গঠনতান্ত্রিকভাবে মেধাবী পরিশ্রমী ও গ্রহনযোগ্য স্মার্ট ছাত্রনেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হউক। একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হবে স্মার্ট ও নিরাপদ যেখানে শিক্ষার্থীরা শতভাগ স্বাধীনভাবে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করবে। আমরা চাইনা অস্ত্রের ঝনঝনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোন মায়ের বুক খালি হোক।’

আরো পড়ুনঃ