কুমিল্লায় মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডারে হাজার হাজার সিএনজি অটোরিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব বাহনে চলছে অসংখ্য মানুষ। বিষয়টা বিপদজনক হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একেবারেই নির্বিকার। ফলে প্রতিদিনই ঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছে সিএনজি’র যাত্রীরা। কুমিল্লায় রয়েছে কমপক্ষে চল্লিশ হাজারেরও বেশী সিএনজি অটোরিক্সা। বিআরটিএ সুত্র জানায়, এখানে রয়েছে অনুমোদিত প্রায় ২০ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা। বাকীগুলো চলছে অনটেষ্ট লাগিয়ে। দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার ৫ বছর পর রিটেষ্ট এর প্রয়োজন থাকলেও সিএনজি মালিক পক্ষ সেটা না করে বছরের পর বছর ধরে যাত্রী পরিবহন করছে।
এতে দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে যাত্রীসহ চালকদের। বিআরটিএ সূত্র আরো জানায়, একটি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে বিআরটিএ অফিসে আসলে অন্যান্য কাগজের সাথে রিটেষ্ট কাগজ সাথে দিতে হয়। রিটেষ্ট কাগজ না দিলে ওই গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয় না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন ঘুরে একাধিক সিএনজি অটোরিক্সা মালিক,চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সময় নষ্টসহ আর্থিক ক্ষতি এড়াতে তারা কোন প্রকার পরীক্ষা বা টেষ্ট ছাড়াই বছরের পর বছর সিএনজি অটোরিক্সা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রিটেষ্ট কাগজ ছাড়া এসব সিএনজি অটোরিক্সার ফিটনেস সার্টিফিকেট না দেওয়ায় বর্তমানে সিএনজি মালিক বা চালকরা বিআরটিএ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতেও আসেনা।
ফলে দেখা গেছে জেলায় চলাচলকারী অর্ধ লক্ষাধিক সিএনজি অটোরিক্সার প্রায় ৭০% ফিটনেসবিহীন। ফলে প্রতিদিনই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে দুর্ঘটনার। সুত্র জানায়,মাঝে মাঝে বিআরটিএ অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও মালিকরা রিটেষ্ট করাতে তেমন আগ্রহী না। এছাড়াও পুলিশ বিষয়টি নজরদারী করতে পারলেও এক্ষেত্রেও তারা অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে। জানা যায়, একটি নতুন সিএনজি অটোরিক্সা চালু হওয়ার ৫ বছর পর সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার রিটেষ্ট করতে হয়। পরবর্র্তীতে ৩ বছর পরপর সেটা রিটেষ্ট বাধ্যতামুলক। কিন্তু জেলার বিভিন্নস্থান ঘুরে মালিক,চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ৮/১০ বছরেও তারা সেটা করেনি।
আবার অনেক মালিক বা চালক রিটেষ্ট কি সেটাও জানে না। ফলে চরম ঝুঁকিতে হাজার হাজার যাত্রীরা প্রতিদিন এক প্রান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছে অন্য প্রান্তে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানান, মালিক পক্ষ প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেও ৪/৫’শ টাকা ভাড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। রিটেষ্ট এর কথা বললে তারা অনীহাসহ গালমন্দ করে উল্টো অন্য চালকদের কাছে গাড়ি দিয়ে দেওয়ার হুমকী দেয়। এ অবস্থায় বেঁচে থাকার তাগিদেই আমরা ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে যাত্রী বহন করি। এতে আমরাও ঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছি। সিএনজি অটোরিক্সার শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মালিকদের অসচেতনতার কারণেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি কুমিল্লার সড়কজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত ,বিরামহীন চালনা এবং জেলার সড়কগুলোর খানাখন্দকের কারণে প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সার গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ঝাঁকিতে ক্ষতি হচ্ছে। এঅবস্থায় এসব সিএনজি অটোরিক্সার বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে সেটাও মানা হচ্ছেনা। সম্প্রতি নগরীর রেসকোর্স এলাকায় যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিক্সার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরন সেটারই ধারাবাহিকতা। দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, কুমিল্লায় রয়েছে মাত্র দুটি সিএনজি সিলিন্ডার রিটেষ্ট সেন্টার। জেলায় যে অর্ধ লক্ষাধিক সিএনজি অটোরিক্সা রয়েছে সেগুলোর জন্য খুবই সামান্য এ দুটি রিটেষ্ট সেন্টার। তবে জেলার বৈধ দুটি রিটেষ্ট সেন্টারের মালিকপক্ষের একটি সুত্র জানায়, বিপুল টাকা ব্যয়ে রিটেষ্ট মেশিন ক্রয় ও বিষ্ফোরক অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স এনে কার্যক্রম শুরু করলেও আমাদের এখানে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
আমরা এ জন্য প্রশিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি ,মাসিক বেতন দিতে হচ্ছে। এত টাকা বিনিয়োগের পর কোন রিটার্ন না আসায় আমরা হতাশ। অথচ জেলায় হাজার হাজার সিএনজি অটোরিক্সা ফিটনেসবিহীন চলছে। বিষয়টি বিআরটিএ’র দেখভালের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সূত্র আরো জানায়,২০১৭ সালে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনায় ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া কোন যানবাহনে গ্যাস সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হলে কিছুদিন সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনগুলোতে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে সেটা মানা হলেও অল্প কিছুদিন পরে সেটা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র আরো জানায়, দালাল চক্র একটা রিটেষ্ট সার্টিফিকেট থেকে ফটোকপি বা কম্পিউটারে ঘষামাঝা করে একই সার্টিফিকেট থেকে শত শত প্রিন্ট করে অন্যান্য সিএনজি অটোরিক্সার ফিটনেস করতে বিআরটিএ’তে নিয়ে গাড়ির মুল কাগজের সাথে জমা দিয়ে ফিটনেস করে নিয়ে যাচ্ছে।
আর এসব ভূয়া রিটেষ্ট সার্টিফিকেটগুলো বিক্রি করছে ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকায়। রিটেষ্ট ,ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে জানতে বিআরটিএ কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আবু আশরাফ সিদ্দিকী মান্নান সাহেবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।