ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির রাজত্ব: এডি জাহাঙ্গীর আলমের ‘সাংকেতিক’ কারসাজি—আসামিরাও পাচ্ছে পাসপোর্ট!

স্টাফ রিপোর্টার।

ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যেন দুর্নীতির এক অঘোষিত দুর্গে পরিণত হয়েছে। এ অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে এবং ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিস থেকে ফিরিয়ে দেয়া মামলার আসামি ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের পাসপোর্ট ইস্যু করছেন আর তার বিনিময়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের ঘুষ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত ও বিভিন্ন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের পাসপোর্ট কুমিল্লা অফিস থেকে বাতিল হলেও, ফেনী অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম সেইসব আবেদন গোপনে গ্রহণ করে পাসপোর্ট করে দেন। এ কাজে তিনি কিছু নির্দিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সিকে ব্যবহার করছেন এবং দালাল চক্রের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত রয়েছে ফেনীর একাধিক ট্রাভেলস যার মধ্যে রয়েছে কাজী ট্রাভেলস, কেবি ইন্টারন্যাশনাল, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল, আমানত ট্রাভেলস, বিশাল ইন্টারন্যাশনাল, ফেনী ব্রাদার্স ইয়ার, ফেনী ইয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও স্বপনের দোকান নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম একটি ‘সাংকেতিক চিহ্ন’ ব্যবহার করেন, যার মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন ফরমে তথ্য গোপন রেখে আসামিদের আবেদন গৃহীত হয় এবং পাসপোর্ট ইস্যু হয়। ফলে বিচারাধীন ও চার্জশিটভুক্ত আসামিরা অবাধে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ছাত্র সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ৫ আগস্টকে জাতির নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে চিহ্নিত করে তারা বলেন, “জাহাঙ্গীর আলম ৫ আগস্টের চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধীদের সহায়তা করছেন। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”

তারা অবিলম্বে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। একইসঙ্গে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে বিষয়টি দ্রুত নজরে নিয়ে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে একজন সহকারী পরিচালক ৫ আগষ্টের পর যেখানে জুলাই শহীদের রক্তের দাগ শুকায়নি, সেখানে এই ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন, তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ ঘটনা শুধু একটি অফিসের দুর্নীতির চিত্র নয়, এটি দেশের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। অপরাধীদের পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পালানোর সুযোগ করে দেওয়ায় দেশে আইনের শাসন প্রশ্নের মুখে পড়ছে।

দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।

আরো পড়ুনঃ