করোনাকাল: জ্বর হয়েছে ? ডেঙ্গু নাকি কোভিড ,কীভাবে বুঝবেন ?

করোনাকাল: জ্বর হয়েছে ? ডেঙ্গু নাকি কোভিড ,কীভাবে বুঝবেন ?

ডাঃ মুজিবুর রহমান ।।

ভাদ্রের গুমোট গরম আবার আচমকা ঝেঁপে বৃষ্টি ।তাতে মাঝে মাঝেই জ্বর ।জ্বর এলেই আবার
কোভিডের আতংক ।কিন্তু সত্যিই কি কোভিড হয়েছে ?না কি ডেঙ্গু হল ?বুঝবো কী ভাবে ?

শরতের শুরুতে জ্বরের প্রকোপ কিছুটা বাড়ে ।জ্বর কোনও রোগ নয় ,রোগের উপসর্গ ।কোনও সংক্রমণ হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জীবানু তাড়ানোর চেষ্টা করে ।তাই জ্বর হয় ।

ইদানীং কোভিডের পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর কারণে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে ।মহামারির ভয়ে জ্বর এলে অনেকেই কোভিড পরীক্ষা করাচ্ছেন ।কিন্তু সকলের তো কোভিড হচ্ছে না ।অন্য কোনও অসুখ হয়েছে কি না,কী করে বুঝবেন ?

ডেঙ্গু এবং কোভিডের জ্বরের কিছু ভিন্নতা আছে ।একটু সচেতন হলেই এই দুই জ্বরকে আলাদা করা কঠিন কিছু নয় ।ডেঙ্গু হলে বিভিন্ন গাঁট সহ শরীর জুড়ে প্রচন্ড ব্যথা হয় ।তাই আগে ডেঙ্গুর প্রচলিত নাম ছিল হাড়ভাঙ্গা জ্বর (Break bone fever)।সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক লাল হয়ে প্রদাহ হতে পারে।

কোভিড জ্বরেও গা-হাত পায়ে ব্যাথা হতে হতে পারে ।তবে এই ব্যথা ডেঙ্গুর তুলনায় অনেক কম ।করোনায় ত্বক লাল হয়ে প্রদাহও হয় না ।।মহামারি শুরুর প্রথম দিকে জ্বর,কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসতেন ।কিন্তু ডেঙ্গুর এই ধরনের উপসর্গ খুব একটা দেখা যায় না ।তবে এই দুইটি রোগের ক্ষেত্রেই মৃদু উপসর্গে রোগ নির্ণয় করা করা অনেক জটিল ।এখন কোভিডের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও রাজধানী জুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশজুড়েই আতংক দেখা দিয়েছে,আর এজন্যই চিকিৎসকরা এই সময়ে বাড়তি কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন ।

ডেঙ্গু কিংবা কোভিডের কারণে জ্বর হলে প্রথম দিকে রোগ নির্ণয় করা বেশ কঠিন ।শিশুদের জ্বর হলে গোড়াতেই এন্টিবায়োটিক বা এন্টিইনফ্লামেটরি জাতীয় জ্বর কমানোর ওষুধ দেওয়া অনুচিত ।আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে,জ্বর কমানোর সেরা উপায় রোগীকে হালকা গরম পানিতে গোসল করানো ।

জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের তত্বাবধানে রাখতে হবে ।বাড়িতে নিজেদের ইচ্ছা মতো চিকিৎসা করানো যাবে না ।ডেঙ্গু বা কোভিডের ভয়ে অনেক অভিভাবক শিশুদের হাসপাতালের ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ।কিন্তু তার প্রয়োজন নেই ।আবহাওয়ার পরিবর্তনে সাধারণ ভাইরাল জ্বর হতে পারে ।শিশুদের যাবতীয় টিকা দিয়ে সাবধানে থাকতে হবে।

কী কী লক্ষণ দেখলে করোনার আশংকা করতে পারেন :

গলা ব্যথা,সর্দি ,শুকনো কাশি,জ্বর জ্বর ভাব,দূর্বলতা,গা ম্যাজম্যাজ করা,মাথা গা হাত পা ব্যথা ,স্বাদ ও গন্ধের বোধ চলে যাওয়া ,চোখ লাল হয়ে পানি পড়া ,,ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথা ,আঙুলের রং বদলে যাওয়া ,বুকে চাপ ধরা ভাব ও যন্ত্রণা ,নি:শ্বাসের কষ্ট,অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা ।এইসব উপসর্গ থাকলে অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ।

যখন মানুষের প্রাণহানির কথা আসে,তখন অন্য কোনো প্রাণী হাঙর,সাপ বা কুমির ততটা মারাত্মক নয়,যতটা মশা ।ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ,যা এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায় । শরীরে তাব্র ব্যথা সৃষ্টির কারণে এর ডাকনাম ব্রেকবোন ফিভার’ ।প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয় ।আর ২০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে মারা যায় ।জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে উষ্ণ তাপমাত্রা মশার ভৌগোলিক পরিসর সম্প্রসারিত করেছে ।ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে ।

আরো পড়ুনঃ