নেকবর হোসেন, নিজস্ব সংবাদদাতা জানানঃ
মাসেকুল হক রেজভী। দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে ছিলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিএনপি থেকে ‘ডিগবাজি’ দেন তিনি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগে। তবে বিএনপির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেননি। সেই হিসেবে তিনি এখনো বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির পদেও বহাল রয়েছেন।
অবাক করা ব্যাপার হলো- ওই ইউনিয়নের মানিকসার গ্রামের বিএনপি নেতা মাসেকুল হক এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি। সম্প্রতি দলের নেতারা তাকে সভাপতির পদে বসিয়েছেন। এনিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে হতাশাও। জনশ্রুতি রয়েছে- দলের পদের পর আর কয়েক মাস পরেই নৌকারও হাল ধরবেন তিনি। প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রাথী হিসেবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার।
পয়ালগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল করিম ওরফে করিম মেম্বার গোমতী টাইমসকে মাসেকুল হকের দলীয় পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। করিম মেম্বার বলেন, রেজভী ভাই দীর্ঘদিন আমার কমিটির পদে ছিলেন। এক/দেড় বছর আগে আওয়ামী লীগ যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে আমাদের কাছে পদত্যাগপত্র দেননি তিনি। আমার কমিটিতে তার পদ এখনো রয়ে গেছে। নতুন কমিটি হলে তিনি অটোমেটিক বিএনপির থেকে বাদ পড়বেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সেখানে মাসেকুল হক রেজভীকে সভাপতি ও শান্তি রঞ্জনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে উপজেলা আওয়ামী। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। বিএনপি নেতাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার পর থেকে দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূল ও ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নাসিমুল আলম চৌধুরি নজরুর। এজন্য ভয়ে এ ঘটনায় অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি জামাল হোসেন বলেন, আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছি। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা একজন বিএনপি নেতাকে বঙ্গবন্ধুর সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মানতে পারে না। দ্রুত একটি কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগীদের মূল্যায়নের দাবি জানাই।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত আহবায়ক কমিটির সদস্য মানিক চন্দ্র সূত্রধর জানান, তিনি (মাসেকুল) গত জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আর ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’, এমপি মহোদয়সহ উপজেলা নেতৃবৃন্দ যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানে আমাদের বলার কিছুই নেই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মী মামুন হোসেন বলেন, এখন দলে ত্যাগের কোন মূল্য নেই। আমাদের হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কী করার আছে। যারা বিএনপি থেকে এসেই আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে বসেন, তারা বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও সেখানেই ফিরে যাবেন। মধ্যখানে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ৫ জন ত্যাগী নেতাকর্মী সমকালকে বলেছেন, মাসেকুল হক অর্থনৈতিক সহযোগীতার মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের সব সময় চাঙ্গা রাখতেন। তার পুরো পরিবার এখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শুধুমাত্র আগামী ইউপি নির্বাচেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্যই তিনি দলে ভীড়েছেন। শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সভাপতির পর তার চেয়ারম্যান পদও প্রায় নিশ্চিত। দলের উপজেলার শীর্ষ নেতাদেরও ভালোভাবে ম্যানেজ করেই মাঠে নেমেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন লিংকন গোমতী টাইমসকে বলেন, সম্মেলনে কাউন্সিলদের মতামতের ভিত্তিতে মাসেকুল হককে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার জানা মতে তিনি এক সময় বিএনপির সমর্থক থাকলেও কোন পদে ছিলেন না। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকে তিনি আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছেন। তাকে বিএনপির পদধারী নেতা বানিয়ে ফেসবুকে একটি ভুয়া কমিটি ছাড়া হয়েছে। এরপরও বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।
এদিকে, এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসেকুল হক রেজভী গোমতী টাইমসকে বলেন, আমি কখনোই বিএনপির কোন পদে ছিলাম না। গত চার বছর আগে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম পূরণ করেছি। এরপর থেকে দলের জন্য কাজ করছি। আমাকে যেই কমিটির বিএনপি নেতা বলা হচ্ছে, সেটা কমিটি ফেইক।