কুমিল্লার স্কুলগুলোতে চকলেট ও মাস্ক দিয়ে বরণ করা হয় শিক্ষার্থীদের।
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
রাবেয়া আক্তার ও তার বোন কুলসুম আক্তার পড়ে একই স্কুলে। একজন পঞ্চম শ্রেণিতে, আরেকজন প্রথম শ্রেণিতে। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস মেখে সকাল ৯টায় তারা হাজির স্কুলের ফটকে।
তারা পড়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই দক্ষিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সারা দেশের সঙ্গে সেখানেও রোববার প্রায় দেড় বছর পর খুলেছে স্কুলের ফটক।
স্কুলে গিয়েই অন্যদের মতো রাবেয়া ও কুলসুম প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিয়েছে। এরপর শিক্ষকরা তাদের মাস্ক ও চকলেট উপহার দিয়ে বরণ করে নেন।
রাবেয়া আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠে, ‘আজকে আমার স্যার দুইটা চকলেট দিয়েছেন। একটা করে মাস্ক দিয়েছেন।’
উচ্ছ্বাসে শিক্ষকদের দেয়া মাস্ক পড়তে গিয়ে ছিড়ে ফেলে স্কুলটির প্রথম শ্রেণির ছাত্র সাফায়েত হোসেন। পরে আরেকটি মাস্ক এনে তাকে পরিয়ে দেন এক শিক্ষক। সাফায়েত বেশ সচেতন এবার, একটু পর পর হাত দিয়ে দেখে নিচ্ছে মাস্ক ঠিক আছে কি না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন জানান, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে। আমাদের স্কুলে ২৯৪ জন শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছে। তাদের আগমন যেন আনন্দময় হয়, সেজন্য স্কুল রঙিন বেলুন দিয়ে সাজিয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চকলেট ও মাস্ক বিতরণ করেছি। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছি।
জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মান্নান কবির ভূইয়া ও প্রধান শিক্ষক স্বপ্নারানী পাল,সিনিয়র শিক্ষক আবু সালে মুসা ভূইয়া, কাজি দাউদুল ইসলাম, শিক্ষিকা শিমুল আক্তার ও সিনিয়র শিক্ষিকা মরিয়ম বেগম সহ সকলে স্কুলের ছাত্র -ছাত্রীদের বরণ করে নেন। এসময় বিদ্যালয়ের সভাপতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করেছেন এবং অভিভাবকদের সচেতন থাকতে বলেছেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন আজ ৫ম শ্রেণিতে উপস্থিত হয়েছেন ৪৫ জন এই শাখায় মোট ছাত্র- ছাত্রী সংখ্যা ৬৪ জন এবং ৩য় শ্রেণিতে উপস্থিত ছিলেন ৫০জন এই শাখায় মোট ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ৯১ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রুটিন অনুযায়ী আজ ৫ম ও ৩য় শ্রেণির কাজ চলছে।
৫ম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা আক্তার বলেন, আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে, আর যাতে স্কুল বন্ধ না হয় এবং সামনে আমাদের সমাপনী পরীক্ষা, সকলে দোয়া করবেন।
সিনিয়র শিক্ষক আবু সালে মুসা ভূইয়া বলেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে স্কুল ধোয়া ও পরিস্কার করেছি এবং সভাপতি এসে সকলকে নিয়ে মিটিং করে সকল অভিভাবকে জানিয়ে দিই কিভাবে আসতে হবে।
স্কুলে আসার সাথে সাথে ছাত্র ছাত্রীদের হাত ধোয়া ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করেছি।
আমরা চাই ভয় নয়, সচেতন হয়ে উঠুক আমাদের শিক্ষার্থীরা।’
চান্দিনা গল্লাই দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো জেলার অন্য সব স্কুলেই শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়েছে উৎসবমূখর পরিবেশে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্কুলেই দেখা গেছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা। অনেকদিন পর সহপাঠিদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় বাধ ভাঙা আনন্দ আর আড্ডায় মেতে উঠেছে শিশু-কিশোররা।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, জেলায় ২ হাজার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফুল বা চকলেট এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম দিয়ে বরণ করে নিতে প্রতিটা স্কুলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।