কুমেক হাসপাতালে ১৩ বছর চলছে ২৫০শয্যার জনবলে ৫০০ শয্যার কার্যক্র!
নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লা প্রায় ২৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ২৫০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালটি ১৩ বছর আগে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়েনি। ফলে ২৫০ শয্যার জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ হাসপাতালের প্রশাসনিক ও চিকিত্সাসেবা কার্যক্রম। বর্তমানে এ হাসপাতালের উপপরিচালক, চিকিত্সক ও কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। কুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে ২৫০ শয্যার কুমেক হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ হাসপাতালে সময়ে সময়ে শয্যা, ওয়ার্ড ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও জনবল বাড়েনি। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে এ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল দেওয়া হয়নি। বর্তমানে এ হাসপাতালটি কুমিল্লার ১৭টি উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার হতদরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তসহ নানা শ্রেণির মানুষের চিকিত্সাসেবায় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু চিকিত্সক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনবলের সংকটের কারণে এ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগীর চিকিত্সাসেবা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগীদের অভিযোগ, এ হাসপাতালের চিকিত্সা সরঞ্জাম, জনবল ও শয্যা সংকটে তারা এখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
কুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালে পরিচালক, চিকিত্সক ও কর্মকর্তাদের অনুমোদিত ১৭৮টি পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে। এর মধ্যে হাসপাতালের উপপরিচালক, কনসালটেন্ট সার্জারি, অর্থো-সার্জারি, চক্ষু, ডার্মাটোলজি, মেডিসিন, ইএনটি, অ্যানেসথেসিয়া, রেজিস্ট্রার ইএনটি, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী রেজিস্ট্রার (সার্জারি) পদে দুইটি, অর্থোপেডিক্স, সহকারী রেজিস্ট্রার (শিশু) ও ইএনটি পদে একটি করে, পেডিয়েট্রিক সার্জারি, বার্ন-প্লাস্টিক সার্জারি, নেফ্রলোজি, ক্যাজুয়েলটি, ইউরোলজি পদে দুইটি করে, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, ডায়ালাইস মেডিক্যাল অফিসার, সহ. সার্জন (এমও) অর্থোপেডিক্স ও ট্রমাটোলজি, ইনডোর গাইনি মেডিক্যাল অফিসার, নিউরো মেডিসিন, মেডিক্যাল অফিসার শিশু ও ক্যাজুয়েলটি পদে একটি করে, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে তিনটি ও রেডিওলজিস্ট (রেডিওলজি ও ইমেজিং) পদে একটিসহ ৩৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ছয় জন চিকিত্সক ও কর্মকর্তা জানান, ২৫০ শয্যার জনবল দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে অন্তত সাড়ে ৮০০ রোগী ভর্তি হন এবং আউটডোরে গড়ে প্রতিদিন চিকিত্সাসেবা নেন অন্তত ১ হাজার ২০০ রোগী। ফলে চিকিৎসা সেবাসহ প্রশাসনিক কাজকর্মে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ‘এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর শয্যা ও ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়লেও জনবল বাড়েনি। এখানে ৫০০ শয্যার জনবল নিয়োগ ও শূন্যপদগুলো পূরণসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামাদির প্রয়োজন। রোগীদের সেবার মান আরো বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’