নিজস্ব প্রতিবেদক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন অধিদপ্তর, দপ্তর ও সংস্থার ২০২০-২১ সালের বার্ষিক উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনায় সারা দেশের ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম হয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।
কীভাবে উদ্ভাবনী কৌশল তৈরি করে দ্রুত সময়ে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দিচ্ছে তারা, তা নিয়ে কথা হয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবদুস ছালামের সঙ্গে কথা বলেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক
নেকবর হোসেন-
নেকবর হোসেন: বার্ষিক উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রথম হয়েছে। কীভাবে এমন অর্জন?
প্রফেসর মোঃআবদুস ছালাম: কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ছয় জেলা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর। শিক্ষা বোর্ড ক্যাম্পাস থেকে প্রতিটি জেলার দূরত্ব অনেক। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বোর্ডে সশরীরে এসে কাজ আদায় করে নিতে সময় ও অর্থ দুটিই ব্যয় হচ্ছে। তার ওপর প্রতিষ্ঠানপ্রধান কর্মস্থলে না থাকলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের গতি অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন ও অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের (নিবন্ধন) কাজ শুরু করে। এতে এ কাজে নথি নিয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বোর্ডে আসতে হয় না। অনলাইনে আবেদন করে, অনলাইনেই কাজ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে নাম ও বয়স সংশোধন, কলেজ পর্যায়ের ছাড়পত্র দেওয়া, ২০১৯ সালে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন, ২০২০ সালে কলেজ গভর্নিং বডির অনুমোদন, বিদ্যালয় ছাড়পত্র দেওয়াসহ মোট ১৭টি কাজ করে। সফটওয়্যার তৈরি করে অনলাইনে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। এতে খুব দ্রুত সেবা পাচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। অনেকটা ঘরে বসেই সেবা পাচ্ছেন তাঁরা। সারা দেশের এত নামকরা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম হওয়ায় পুরো শিক্ষা বোর্ড পরিবার খুশি।
নেকবর হোসেন: এমন সাফল্যের পেছনের গল্পটা যদি বলেন?
প্রফেসর মোঃ আবদুস ছালাম: একসময় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে চট্টগ্রাম ও সিলেট ছিল। তখন অনেক জনবল ছিল। চট্টগ্রাম ও সিলেটে আলাদা শিক্ষা বোর্ড হওয়ার পর কুমিল্লায় জনবল কমে যায়। যাঁরা আছেন,তাঁদের কেউ কেউ পর্যায়ক্রমে অবসরে যাচ্ছেন। এখন এই বোর্ডে ১৭ জন কর্মকর্তা ও ৫৭ জন কর্মচারী আছেন। সব মিলিয়ে জনবল ৭৪ জন। তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রথমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিই। খুঁটিনাটি বিষয় অনলাইনে কীভাবে আয়ত্ত করা যায়, তার কৌশল বাতলে দেওয়া হয়। এতে একটি দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়। তখন আমরা নানা ধরনের সফটওয়্যার দিয়ে সেবা দেওয়া শুরু করি। যেমন ধরুন, কোনো স্কুল-কলেজের কমিটির আবেদন ও অনুমোদনের জন্য পয়সা খরচ করে বোর্ডে আসতে হয় না। অনলাইনে আবেদন করে, অনলাইনেই ফল পাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। অনায়াসে কাজটি করে দিচ্ছি। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। পরে অন্যরা সেটি অনুসরণ করছে। দলগত প্রচেষ্টায় উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনায় সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।
নেকবর হোসেন: একসময় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে সেবাগ্রহীতারা এসে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতেন বলে অভিযোগ। এখনকার অবস্থা কেমন?
প্রফেসর মোঃ আবদুস ছালাম: আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। এখান কেউ হয়রানির শিকার হন না। আমরা সিটিজেন চার্টার টাঙিয়ে দিয়েছি। কোন কক্ষে কোন ধরনের সেবা দেওয়া হয়, সেটি উল্লেখ রয়েছে। বোর্ডের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় করিডরে চেয়ার পেতে দেওয়া আছে। সেবাগ্রহীতারা সেখানে বসেন। কারও কাজে ধীরগতি থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ডিজিটাল সেবা দেওয়ার কারণে মানুষের ভোগান্তি কমে গেছে।
নেকবর হোসেন: ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী?
প্রফেসর মোঃ আবদুস ছালাম: ১৯৬২ সালের ২ নভেম্বর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬০ বছর ছুঁইছুঁই এ প্রতিষ্ঠানের বয়স। কীভাবে আরও দ্রæততম সময়ে সেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করব। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কাজ করব।