নিয়মিত মদ- জুয়ার আসর বসে হাসপাতালে

আরিফ আজগর।

কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর পাঁচ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০৬ সালে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল নাঙ্গলকোটের গেহারুয়ায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এতগুলো বছর পার হলেও চিকিৎসা সেবা দিতে পারেনি হাসপাতালটি।

জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নে অবস্থিত হাসপাতালটির সংযোগ সড়ক রয়েছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও সেনবাগের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি লাকসামের একাংশের প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে ৪ দলীয় ঐক্যজোট সরকারের সময় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে হাসপাতালটির।

জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে ১৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি হাসপাতালটি। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, না অন্তর্বিভাগ, কোনো বিভাগে চিকিৎসা সেবা নেই এই হাসপাতালে। বহির্বিভাগে মাঝেমধ্যে একজন চিকিৎসক এলেও ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় রোগীরা সেবা নিতে আসে না, ফলে তিনিও কিছুক্ষণ অলস সময় পার করে আবার চলে যান।

কোনো স্টাফ কর্মরত না থাকায় সঠিক তদারকির অভাবে এই হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে ময়লা জমেছে। ভাঙাচোরা আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভবনের চারদিকে লতাপাতা জন্মেছে, দূর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন ভূতুড়ে বাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ ডাক্তার বা রোগী না আসায় এই হাসপাতালে নিয়মিত মদ-জুয়ার আসর বসে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান এই হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। হাসপাতাল ভবন ছাড়াও আরও তিনটি দ্বিতল ভবন ও দুটি একতলা ভবন স্থাপন করা হয় চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের জন্য।

কোনো চিকিৎসক পদায়ন না করে উদ্বোধন হওয়ায় শুরুতেই ঝিমিয়ে পড়ে হাসপাতালটি। উদ্বোধনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় স্থানীয়দের দাবিতে ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে হাসপাতালটি চালু ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে চিঠি পাঠায় জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ।

সে বছর হাসাপাতালটির জন্য ৬ জন চিকিৎসক ৬ জন নার্সের মোট ১২টি পদ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় মাত্র ১ জন চিকিৎসককে। ওই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি এ হাসপাতালে ছিলেন কাগজে কলমে। তিনি যাওয়ার পর দুই নারী চিকিৎসক, একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও গাইনি বিশেষজ্ঞ কিছুদিন দায়িত্ব পান। তাদের কেউই বাস্তবে আসেননি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঢাকায় চলে যান গাইনি চিকিৎসক। চিকিৎসা কর্মকর্তা সপ্তাহে দুইদিন এই হাসপাতালে ও চারদিন নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন। কিছুদিন পর তিনিও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে পরিত্যক্ত পড়ে আছে হাসপাতালটি।

বর্তমানে ওই হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসক এবং ৩ জন নার্স কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু তারা হাসপাতালে নিয়মিত সময় না দিয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সময় দেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। মাঝেমধ্যে একজন বহির্বিভাগের চিকিৎসক সেবা দিতে এলেও কয়েক ঘন্টা সময় দিয়ে আবার চলে যান তিনি।

 

সাদ্দাম হোসেন নামের ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এটি নামেই হাসপাতাল। কাজের কাজ কিছুই হয় না এখানে। ডাক্তার, নার্স, স্টাফ না থাকায় সন্ধ্যা হলেই মাদকাসক্তদের আড্ডা জমে। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ এবং মাঠ এলাকার মানুষেরা যে যার মতো করে ব্যবহার করে। আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ভূঁইয়া বলেন, বার বার উদ্যোগ নিয়েও হাসপাতালটির প্রাণ ফেরাতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালটির পরিবেশ ফিরিয়ে এনে চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ দিলে এ এলাকার অনেক মানুষ সেবা পাবে।

নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবদাস দেব বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ডাক্তাররা সেখানে যেতে চান না। হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ সব ধরণের সুবিধা নিশ্চিত করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, এসব বিষয়গুলো আসলে কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত হয়। কুমিল্লার সবগুলো ২০ শয্যার হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থ বরাদ্দসহ সকল চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি একটু সময় লাগলেও ২০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে সঠিক চিকিৎসা সেবা চালু হবে।

আরো পড়ুনঃ