কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বৈলপুর গ্রামে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যার বিয়ে আয়োজনের অভিযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিয়ে বন্ধ ও অর্থদণ্ড প্রদান করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় ভুয়া জন্মতারিখ দেখিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ কার্যক্রম চালানো হয় বলে প্রমাণ মেলে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সরওয়ার লিমা। অভিযানে সহায়তা করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের একটি দল।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, বৈলপুর গ্রামে সানজিদা আক্তার (১৫) নামে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছে। মোবাইল কোর্ট সেখানে উপস্থিত হলে মেয়ের মা আয়েশা বেগম জানান, তার কন্যার বয়স ১৮ বছর এবং বিয়ে ইতোমধ্যে কোর্ট ম্যারেজের (নোটারী পাবলিক) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
মেয়ের বয়স প্রমাণে একটি নোটারী পাবলিক ডকুমেন্ট দেখানো হয়, যেখানে জন্মতারিখ ৩১ মে ২০০৬ উল্লেখ ছিল। তবে মেয়েকে সরেজমিনে দেখে ম্যাজিস্ট্রেটের সন্দেহ হয় এবং সুকৌশলে প্রকৃত জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে যাচাই করা হয়।
সেখানে দেখা যায়, সানজিদার প্রকৃত জন্মতারিখ ৩১ মে ২০১০। অর্থাৎ তার বয়স বর্তমানে ১৫ বছর। ফলে এটি একটি স্পষ্ট বাল্যবিবাহ এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযানের পর সানজিদার পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ প্রদান করা হয়। তারা তাৎক্ষণিক অর্থ পরিশোধ করেন এবং মেয়েটি ও তার মায়ের কাছ থেকে ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহে সম্পৃক্ত না হওয়ার অঙ্গীকারপত্র (মুচলেকা) গ্রহণ করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করতে নোটারী পাবলিক, কুমিল্লা ভুয়া জন্মতারিখ ব্যবহার করে একটি বিবাহপত্র প্রস্তুত করেন। যা এই ধরনের বিয়েকে “আইনি” চেহারা দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাল্যবিবাহ রোধে শুধু পরিবার নয়, নোটারী পাবলিকের ভূমিকাও গভীরভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। এ ধরনের প্রতারণামূলক বিবাহ বন্ধ করতে আইনগত ও প্রশাসনিক উদ্যোগ আরও জোরদার করা হবে।