কুমিল্লায় পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাতে প্রভাবশালীরা দেদারসে জেলার অধিকাংশ পুকুর-দীঘি-জলাশয় ভরাট করছে। অবৈধভাবে গোমতীর মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। কয়েকশ ইটভাটা গাছ পালা জীববৈচিত্র বিলীন করে দিচ্ছে। পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে এ দপ্তরের কর্মকর্তারা কার্যকর কোনও ভূমিকা পালন করছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এছাড়া পরিবেশের অন্যতম প্রাকৃতিক নির্দশন ঐতিহাসিক কুমিল্লা লাইমাই পাহাড়ের ২০-২৫ স্পট থেকে প্রক্যাশ্যেই লাল মাটি কেটে পাহাড় বিলীন করা হচ্ছে। কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি এ কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে লালমাই পাহাড় কাটা, গোমতীর অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন, বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় ভরাট বন্ধে নানাভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
তিনি জানান, গোমতীর দুইপাড়ের কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় কৃষকদের অভিযোগে প্রেক্ষিতে আমি প্রশাসনের মাধ্যমে সকল প্রকার বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধ করেছি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া ঈদগাঁ ও মসজিদসংলগ্ন শত বছরের প্রাচীন বড় বাড়ির পুকুরটি প্রায় ভরাট করে ফেলেছেন প্রভাবশালীরা। ওই পুকুরটি ভরাট বন্ধ করতে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার পায়নি। একই এলাকায় পরিবেশ ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের কোনও তোয়াক্কা না করেই দুইশ বছরের প্রাচীন কাজী পুকুরও অর্ধেক ভরাট করে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৫০ শতকের ওই পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে এলাকায় সৃষ্টি হবে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। সম্প্রতি ওই ওয়ার্ডের ইপিজেড এলাকায় পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই একটি পুকুর ভরাট চলছে। এদিকে, নগরীতে রাতের আঁধারে ভরাট হয়ে যাচ্ছে তিনশ’ বছরের পুরানো ছোটরা জংলিবিবি পুকুর। এ পুকুরের উত্তর পাশে রাতের আঁধারে কৌশলে চলে ভরাটের কাজ। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ঐহিত্যবাহী এই পুকুরটি জংলিবিবি মসজিদের মুসল্লিদের অজু, গোসলের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছিলো। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে নগরীর সংরাইশ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি পুকুর ভরাট হয়েছে এবং ভরাট চলছে। কুমিল্লা নগরীসংলগ্ন শুভপুর ও চাঁনপুর বিশাল জলাশয় ভড়াট কাজ চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনেই। অবাধে জলাশয় ভরাট চললেও ‘চুপচাপ’ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা রহস্যজনক বলে দাবি এলাকাবাসীর।
নগরীর হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো.শাহজাহান বলেন, এসব পুকুর ও জলাশয় ভরাট হয় কৌশলে। দেখা গেছে ভরাটের সময় প্রশাসন বাধা দিলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন ভূমিকা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি এ কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পরই পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো একের পর এক ঘটনা বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ডা.মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবেশ রক্ষায় অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ সকলকে আরও কঠোর হতে হবে। পরিবেশের বিপর্যয়ে যেসকল ইটভাটা চলছে এবং পুকুর ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে পরিবেশ অদিদপ্তর এর দায় এড়াতে পারে না। দ্রুত এসব ভরাট বন্ধ করা উচিত এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা কোনও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। পরিবেশ রক্ষায় পুকুর ও জলাশয় ভড়াটকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। বেশকিছু ভড়াটকারীকে নোটিশ দেয়া এবং জরিমানা করা হয়েছে। নগরী এবং পৌর এলাকায় ইটভাটাগুলোকে নোটিশ এবং জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে লালমাই পাহাড় কাটা বন্ধেও আমাদের কার্যক্রম চলছে।–সূত্রঃ আরটিভি