স্পোর্টস ডেস্ক নিউজ।।
এবারের গ্রীষ্মকালীন দল বদলকে অনেকেই ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দল বদল বলছে। প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে বার্সেলোনা ছেড়েছেন মেসি, রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন সের্হিও রামোস। নিজ ঘরে ফিরেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও রোমেরো লুকাকো। পুরো দল বদলটাই ইতিহাসের শ্রেষ্টতম দল বদলের অংশ হয়ে রয়েছে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরার পর থেকে গোলের বান বইয়ে চলেছেন। পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে, চার ম্যাচেই গোল করেছেন রোনালদো। ৫ ম্যাচে তাঁর গোল হয়ে গেছে ৪টি।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের এমন পারফরম্যান্সে কিছুটা ছায়ায় হয়ে পরছিলেন মেসি। বার্সেলোনার সঙ্গে একুশ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে পিএসজিতে নতুন ডেরায় সুবিধা করতে পারছিলেন না ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার। পিএসজির হয়ে তিন ম্যাচ খেলেও গোল নামক সোনার হরিণ ধরা দিচ্ছিলো না আর্জেন্টাইন অধিনায়কের।
না, মেসি খারাপ খেলছিলেন এমনও কিন্তু নয়; কখনও গোলবার, কখনও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের নৈপুণ্যে, সামন্যের জন্য গোলের ভাগ্যই যেন পাস কেটে যাচ্ছিল মেসির। নিন্দুকেরাও সময় বুঝে সমালোচনাও করা শুরু করল। অনেকে পিএসজিতে মেসি চলবে না এমন রবও তুলেছিলো।
কিন্তু, মানুষটি মেসি। তাই, সকল সমালোচনার যোগ্য জবাব দিতে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার খুঁজে নিলেন সময়ের অন্যতম সেরা ক্লাবটিকেই। পিএসজির হয়ে নিজের ‘গোলখরা’ লিওনেল মেসি কাটালেন গুরু পেপ গার্দিওলার দলের বিপক্ষেই।
সব আশঙ্কা দূর করে চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘তেল ক্লাসিকো’ পিএসজির জার্সি জার্সি গায়ে দুর্দান্ত গোল করে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে গেলেন সাবেক বার্সেলোনা তারকা। আর দলের সেরা তারকার জাল খুঁজে পাওয়ার দিন পিএসজিও ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে গেলবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ হারের মধুর প্রতিশোধ নিলো।
আজ (মঙ্গলবার) ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের আসরে গ্রুপ এ’, এর ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছে পিএসজি। ঘরের মাঠে আক্রমন প্রতি আক্রমণে উত্তেজনা ঠাসা ম্যাচে শুরুতে ইদ্রিসা গুয়ে গোল করার পর শেষ দিকে সফরকারী দলের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন লিওনেল মেসি।
পার্ক দেস প্রিন্সেসে আরবের টাকায় হঠাৎ ফুলেফেঁপে বড় হয়ে উঠা দুই দলের লড়াইয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিলো ম্যান সিটির। বল দখল কিংবা প্রতিপক্ষের গোলবারে শট সব কিছুটেই পিএসজির চেয়ে এগিয়ে ছিলো সফরকারীরা। নিয়ন্ত্রণ সব পেপ গার্দিওলার দল করলেও শুরুতে গোল পেয়ে যায় পিসজি।
ম্যাচের অষ্টম মিনিটে ইদ্রিসার গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এ গোলেও অবদান রয়েছে মেসির। তারকা এই ফরোয়ার্ডের বাড়ানো বল থেকে ডি-বক্সে নেইমারের উদ্দেশ্যে দারুণ এক কাটব্যাক করেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে বলে ঠিকভাবে সংযোগ করতে পারেননি এ ব্রাজিলিয়ান। তার শট প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে চলে যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো ইদ্রিসার পায়ে। জোরালো লক্ষ্যভেদ করতে কোনো ভুল হয়নি সেনেগালের এ মিডফিল্ডারের। প্রথমার্ধে অনেক চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি পেপ গার্দিওলার দল।
বিরতির পর ফিরেই আক্রমণের ধার বাড়ায় সিটি। অল্পের জন্য সমতায় ফিরতে পারত সফরকারীরা। ৫৪তম মিনিটে গোলরক্ষক ডোনারুম্মা রক্ষা করে স্বাগতিকদের। ডি ব্রুইনার দারুণ এক প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেন ইতালিয়ান এই গোলরক্ষক। মাহরেজের থ্রু বল পেয়ে ডান প্রান্তে অনেকটা ফাঁকায় থেকে কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন এ বেলজিয়ান। কিন্তু তার শট দারুণ দক্ষতায় পা দিয়ে ঠেকান ডোনারুমা।
৬৫তম মিনিটে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন নেইমার। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে ফাঁকায় থাকা নেইমারকে বল দিয়েছিলেন হাকিমি। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। শট নিতে দেরি করায় এক ডিফেন্ডার চার্জ করলে তখন তড়িঘড়ি করে শট নিয়ে বাইরে মারেন তিনি। ছয় মিনিট পর ডি ব্রুইনার দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
৭৪তম মিনিটে পিএসজি ক্যারিয়ারের প্রথম গোল পান মেসি। পাল্টা আক্রমণ থেকে এমবাপের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিখুঁত এক শটে বল জালে পাঠান সাবেক বার্সেলোনা অধিনায়ক। গোলরক্ষক এদেরসনের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা তার ১২১তম গোল।
পাঁচ মিনিট পর তো দুর্দান্ত ডোনারুমা। সিলভার ক্রস থেকে মাহরেজের নেওয়া বুদ্ধিদীপ্ত কোণাকোণি শট ঠেকান তিনি। ম্যাচের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মাহরেজের ফ্রিকিক থেকে নেওয়া দারুণ শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক। শেষপর্যন্ত সিটির বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় পিএসজি।
এ নিয়ে ষষ্ঠবারের দেখায় সিটির বিপক্ষে প্রথম জয় পেল পিএসজি। আগের পাঁচ মোকাবেলায় সিটি জিতেছে তিন ম্যাচে। অপর দুটি ম্যাচ ড্র হয়।সূত্র স্পোর্টস