কেটে ফেলা হচ্ছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ৫০ বছরের পুরনো গাছ

 

স্টাফ রিপোর্টার।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রাণীবিদ্যা ভবন ও ছেলেদের আবাসিক কাজী নজরুল হলসহ কলেজ চত্বরের বেশ কয়েকটি স্থানে প্রায় ছয়টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার ( ১৮ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,
কলেজে জুড়ে বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত বর্ষী বেশ কিছু গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগে সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে দিকে কলেজ নজরুল হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়,তিন থেকে চারজন শ্রমিক হলের মূল ফটকের সামনে লোহার রেলিংয়ের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে গোলচত্বরের ভেতরে প্রবেশ করে গাছ কাটছেন।

এর কয়েকদিন আগেই কলেজের প্রাণী বিদ্যা ভবনের সামনে মেহগনি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে ।

একজন শ্রমিক বলেন , তাঁরা ৫০০ টাকা দিন-হাজিরা চুক্তিতে গাছ কাটার কাজ করছেন। পাশে বসা কয়েকজনকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওনারা আমাদের ডেকে এনে কাজে লাগিয়েছেন। কতটা গাছ কাটতে হবে এখনো কিছু বলেননি।’

গাছ কাটা তদারকি করছিলেন কলেজের কয়েকজন কর্মচারী। তারা বলেন, অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশেই তারা শ্রমিক লাগিয়ে গাছ কাটছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন,কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.আবু জাফর খানের ছত্রছায়া বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো.শাহজাহান সপ্তাহের মাথায় কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই গাছগুলো কেটে সাবাড় করছেন।

এ বিষয় বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন,আমি এ বিষয় কিছু জানি না,আমি বক্তব্য দিতে ইচ্ছুক নই। আপনি কলেজ প্রশাসনের সাথে কথা বলুন।

শোভাবর্ধনের অজুহাত তুলে এসব গাছ কাটা হলেও কোন নিয়মকানুন মানা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের সাত-আটজন সাধারণ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, খোঁড়া অজুহাতে এসব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব গাছের দাম প্রায় লাখ টাকা।গাছ কেটে পরিষ্কার নামে পুরো কলেজের সৌন্দর্যবর্ধন  নষ্ট করছেন কতৃপক্ষ। অথচ এ নিয়ে কথা বললে শিক্ষার্থীদের ভয়তীতি দেখায় এক শিক্ষক।

ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী জামাল হোসেন বলেন,কয়েকদিন পর পর পরিষ্কারের নামে প্রাচীন গাছগুলো কেটে ফেলছে কলেজ প্রশাসন। কলেজে কোনো সংস্কার কাজ ছাড়াই এভাবে গাছ কাটছে কলেজের কি? টাকা অভাব পড়ছে যে গাছ কেটে বিক্রি করে দিতে হবে।

কলেজের একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,স্যার কয়েকদিন পরপর কলেজে বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটছে,গণমাধ্যমে খবর এড়াতে একসাথে গাছ না কেটে একটি একটি করে গাছ গুলো কাটছেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী সায়েম বলেন,গাছগুলো কাটা ঠিক হয়নি।কোন সংস্কার কাজ ছাড়া এভাবে গাছ কাটার দরকার কি? কলেজে প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে এটা করা উচিত হয়নি।

অভিযোগের জানতে চাইলে চাইলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান মোবাইলে বলেন, কলেজের ছাত্র হলের সামনে একটা গাছ ছিল,এটা আমরা পরিষ্কারে জন্য কাটা হয়েছে,প্রানী বিদ্যা ভবনের সামনে গাছগুলো তো আগেই কাটা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের সাথে আম গাছ গুলো আমরা কাটিনি। কে বা কারা কাটছে, আমার জানা নেই। অনুমতি নেওয়া প্রশ্নে তিনি বলেন,এ বিষয় পরে কথা বলব। কলেজে একদিন এসো।

কুমিলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী, মো. জাকির হোসেন বলেন আমি নতুন জয়েন করেছি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অর্ধশত বছরের পুরনো কয়েকটি গাছ কেটে ফেলার ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি আরো বলেন আমি যতটুকু জানি গাছগুলো কাটার ব্যাপারে বন বিভাগের অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে।সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের গাছ অপসারণের প্রয়োজন হলে তা প্রথমে বন বিভাগকে লিখিতভাবে জানাতে হয়। বন বিভাগ কাটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা জানতে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে।

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন,সরকারি কলেজের গাছ কাটতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানোর কথা; কিন্তু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রশাসন বিষয়টি বনবিভাগ,পরিবেশ ও শিক্ষা  অধিদপ্তরকে জানায়নি।

এব্যাপারে কুমিল্লা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিকবার কল দিয়েও কারোর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুনঃ