করোনার টিকা এখন দোরগোড়ায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। আগামী ২১ থেকে ২৫শে জানুয়ারির মধ্যেই দেশে আসবে ভ্যাকসিন পৃষ্ঠা ১০ কলাম ১ । ২৬শে জানুয়ারি থেকে শুরু হবে অনলাইন নিবন্ধন। এ অবস্থায় গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভার্চ্যুয়াল সভার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে দু’-একদিন মধ্যে অ্যাপস চলে যাবে। তখন নাম-ঠিকানা ধরে তালিকা তৈরি হবে বলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দু’-একদিনের মধ্যে জেলা ও উপজেলার কমিটিগুলোক বৈঠকও করতে বলেছে কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা।
করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ইতিমধ্যেই জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় দিন গুনছে মাঠ প্রশাসন। করোনার টিকার বিষয়ে সর্বশেষ কী নির্দেশনা আছে জানতে চাইলে জেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য সচিব এবং বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা একটি প্রাক্কলিত সংখ্যা তৈরি করে রেখেছি। এখনও তালিকা চাওয়া হয়নি। তবে অ্যাপসের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা আছে। এই অ্যাপস দু’-একদিনের মধ্যে কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হবে। তখন নাম- ঠিকানা ধরে তালিকা তৈরি করতে হবে। যে সংখ্যা তৈরি করা হয়েছে তার সঙ্গে হয়তো আরো ১০ থেকে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত টিকার চাহিদা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একসঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব নয়। তাই মাইক্রো প্ল্যান তৈরি করে তালিকা হবে। করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধারা ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। পেশাভিত্তিক তালিকা হবে। প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে কী ব্যবস্থা থাকবে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জানান, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক তাদের সতর্কতামূলক প্রস্তুতি থাকবে। দু’-একদিনের মধ্যে তাদের কমিটির বৈঠক করারও নির্দেশ দিয়েছে অধিদপ্তর। এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদেরকে অনলাইনে ভ্যাকসিন বিষয়ে প্রাথমিক কিছু নির্দেশান দিয়েছে। ভ্যাকসিন কীভাবে রাখতে হবে। তালিকা এখন তৈরি হয়নি। পুরোপুরি নির্দেশনা পেলে তালিকা হবে। তিনি জানান, তারা প্রস্তুত রয়েছেন। দু’-একদিনের মধ্যে কমিটির বৈঠক হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উপজেলা পর্যায়ে কমিটির সভাপতি এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবেকুন নাহার মানবজমিনকে বলেন, কারা ভ্যাকসিন পাবেন তার নির্দেশনা এখনও পাইনি। তালিকা হয়নি। নির্দেশনা পেলে কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। গতকাল এ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধিদপ্তরের কোনো বৈঠক হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আগামী ২১ থেকে ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসবে। এর দুইদিন পর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যার হাউজ থেকে তা বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য আলাদা টিম গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত ৫ই নভেম্বরে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। আর কোভ্যাক্সের ৬ কোটি ৮০ ডোজ টিকা আসবে মে-জুনে। অক্সফোর্ডের তৈরি এই টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। তবে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসাথে ৫০ লাখ মানুষকে দেয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে আরও টিকা চলে আসবে।—-সূত্র: মানবজমিন