ডিজে নেহার কথিত খালাতো ভাই সাফায়েত জামিল রিমান্ডে।
পথিকৃত ডেস্ক।।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ডিজে নেহার কথিত খালাতো ভাই সাফায়েত জামিল নামে এক শিক্ষার্থীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ওই শিক্ষার্থীকে এক দিনের রিমান্ড আদেশ মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সাফায়েত জামিলকে সাত দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন।
এদিন ওই রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সাফায়েতের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামির আইনজীবী এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালত সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরীরর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবার দায়ের করা মামলায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাফায়েত জামিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সেদিন লিখিতভাবে বলেন, তিনি এই মামলার আসামি হতে চান। তাকে যেন এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেদিন আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে ডিজে নেহার কথিত এই খালাতো ভাইকে নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেপ্তার এই তরুণের পুরো নাম শাফায়াত জামিল বিশাল। এই তরুণ অপকর্মের ডিজে নেহা ওরফে কুইন নেহার সম্পর্কে খালাতো ভাই। বিশাল নেহার ডান হাত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো।
বিশাল নামের তরুণ প্রায় সার্বক্ষণিকই নেহার সঙ্গেই থাকতো বলে জানা গেছে। শিশা লাউঞ্জে নেহা ও বিশালের গোপন ভিডিও গণমাধ্যমের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
নেহার খালাতো ভাই পরিচয় দেয়া শাফায়াত জামিল বিশাল মূলত তাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় নয় বলে জানান নেহার খালা। তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, নেহারা আগে যে বাসায় ভাড়া থাকতো ওই বাসার এক মহিলাকে ধর্মের বোন ডেকেছে আমার বোন। সে থেকেই নেহা ও বিশাল খালাতো ভাইবোন পরিচয়ে একসঙ্গে চলাফেরা করতো, ঘুরে বেড়াতো। বিশাল উশৃঙ্খল প্রকৃতির ছেলে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে- বিশালের হাত ধরেই নেহা এমন পথে পা বাড়ায়।
তথ্য পাওয়া গেছে, উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদ পান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত ভূমিকা পালন করে। মদ পানের পর ওই আরাফাতও মারা গেছে। নেহার ফোনেই তার খালাতো ভাই শাফায়াত জামিল বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যায় ওই রেস্টুরেন্টে। বিশাল নেহার ক্লায়েন্টদের তালিকা সংরক্ষণ করতো। এছাড়াও অবৈধ দরদামে সে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্বপালন করতো।
নেহার খুব পছন্দের মোবাইল ফোন ব্রান্ড ‘আইফোন’। টার্গেটকৃত শিল্পপতি ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই মোবাইল-ফোনে সংরক্ষণ করে রাখতো ডিজে নেহা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বৃহস্পতিবার ডিজে নেহা গ্রেফতার হন। এরপর শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রাতের ঢাকার বার-রেস্টুরেন্টের অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বো সুটে নেহার আয়োজিত মদের পার্টিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। পরে মোহাম্মদপুরের এক বান্ধবীর বাসায় তাকে নিয়ে অবস্থান করেন তার বন্ধু রায়হান। রাতে রায়হানের সঙ্গে ওই ছাত্রীর শারীরিক সম্পর্ক হয়।
পরদিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। রায়হানসহ পাঁচজনকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা মামলা করেন। এ মামলার আসামি আরাফাত বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া রায়হান, তাফসির ও শাফায়েত জামিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।