ইন্টারনেটের অর্ধেক খরচই বেহুদা
ডেস্ক নিউজ।
সময়ের পরিক্রমায় বেড়েছে ইন্টারনেটের প্রসার, বাড়ছে এর গ্রাহক সংখ্যাও। বিশেষ করে করোনাকালে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেশি। ইন্টারনেট সেবাদাতাদের তথ্য মতে, দেশে প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৬০০ জিবি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করেন ১২ কোটিরও বেশি গ্রাহক। দিনের বেলা এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ কাজে হলেও রাতে ভিন্ন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, আইএসপিএবির তথ্য বলছে, রাত ১২টা থেকে ভোর ৬ পর্যন্ত ইন্টারনেটের অর্ধেকই খরচ হয় অকাজে। ওই ৬ ঘণ্টায় পর্নোগ্রাফি, অনলাইন গেম, টিকটক আর লাইকি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বেশির ভাগ ব্যবহারকারী।
জানা গেছে, দুই বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা প্রায় ৪২ হাজার অভিযোগ জমা দিয়েছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি)। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৯৫টিই ভয়েস কল ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা নিয়ে।
অসহনীয় মাত্রায় কল কেটে যাওয়া (ড্রপ), ইন্টারনেটে ধীরগতি, বিভিন্ন প্যাকেজের ফাঁদ, গ্রাহকের অজান্তে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস চালু করে টাকা কেটে নেওয়া এ রকম অভিযোগই বেশি।
শুধু বিটিআরসিতে জমা পড়া অভিযোগ নয়, গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপ করে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, মোবাইল ফোনে কথা বলে শান্তি নেই। বারবার কেটে যায়। ইন্টারনেটও সাশ্রয়ী নয়। ব্যবহারেও নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়। তবু বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, মোবাইল অপারেটরদের ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট ডাটা প্যাকেজ নিতে গিয়ে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। কম টাকায় বেশি ডাটার অপারেটরের লোভনীয় অফারের মেসেজ দেখে অনেকেই প্যাকেজ কিনে দেখছেন, সুনির্দিষ্ট একটি অ্যাপ ছাড়া আর কিছুতেই এ প্যাকেজের ডাটা ব্যবহার করা যায় না।
বাংলাদেশি মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্যও অনেক বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে মূল্য অনেক বেশি। ভারতে মোবাইল অপারটেররা প্যাকেজে গ্রাহকদের যে সুবিধা দেয়, বাংলাদেশি অপারেটররা তা দেয় না।
এ দিকে, দেশে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার যে দাবি অপারেটররা করে, তার যথার্থতা নেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতে রিয়ালায়েন্স জিও, ভারতি এয়ারটেলের মতো অপারেটরদের প্যাকেজ বাংলাদেশের অপারেটরদের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। যেমন- ভারতি এয়ারটেল ২৮ দিন মেয়াদে ২৪৯ রুপিতে যে প্যাকেজ দিচ্ছে, সেখানে ভয়েস কল আনলিমিটেড। পাশাপাশি মেয়াদের প্রতিদিন গ্রাহক এক গিগাবাইট (জিবি) পরিমাণ ডাটা ব্যবহার করতে পারবেন এবং ১০০টি এসএমএস পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ, গ্রাহক ২৯৯ রুপি দিয়ে ২৮ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।
ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশি টাকার বিনিময় মূল্য বর্তমানে ১ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ১ টাকা ২০ পয়সা ওঠা-নামা করে। ১ টাকা ২০ পয়সা বিনিময় মূল্য ধরলে ভারতীয় ২৯৯ রুপির বিপরীতে হয় ৩৫৯ টাকা। এখন ৩৫৯ টাকায় ২৮ জিবি ইন্টারনেট পাওয়া গেলে প্রতি জিবি ইন্টারনেটের দাম পড়ে ১২ টাকা ৮১ পয়সা।
এ ছাড়া ৩০ দিন মেয়াদে বড় আকারের প্যাকেজেও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের অপারেটরদের দাম বেশি। যেমন ৪০ জিবির জন্য গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ৬৪৯ টাকা। এখানে প্রতি জিবি ইন্টারনেটের দাম পড়ে ১৬ টাকা ২২ পয়সা।
বাংলালিংকের ৩০ দিন মেয়াদে ৫৫ জিবি ইন্টারনেটের দাম ৯৯৯ টাকা। এই হিসাবে প্রতি জিবি ইন্টারনেটের দাম পড়ছে ১৮ টাকা ১৬ পয়সা। রবির ২৮ দিন মেয়াদে ২৫ জিবির দাম ৬৪৯ টাকা। প্রতি জিবির দাম পড়ে ২৫ টাকা ৯৬ পয়সা।
রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের প্যাকেজ তালিকা অনুযায়ী নিয়মিত প্যাকের ক্ষেত্রে ৩০ দিন মেয়াদে এক জিবি ইন্টারনেটের দাম ৪৯ টাকা। আবার বাংলাদেশে ইউটিউব, ইমো, ফেসবুক প্রভৃতি অ্যাপের জন্য সুনির্দিষ্ট ডাটা প্যাকেজ দেওয়া হয়। যেখানে কম টাকায় বেশি ডাটা থাকলেও সেই ডাটা দিয়ে সাধারণ ব্রাউজিংয়ের সুযোগ থাকে না।
ভারতের প্রায় সব ইন্টারনেট প্যাকেজে আনলিমিটেড ভয়েস কল সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না।সূত্র প্রতিদিনের সংবাদ